জাতীয়

জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ

প্রধানমন্ত্রী নয়, মন্ত্রীসভার অনুমোদনে জারি হবে জরুরি অবস্থা

জরুরি অবস্থা ঘোষণা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে রোধে নতুন বিধান তৈরিতে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী এককভা‌বে নন, ম‌ন্ত্রিসভার অনু‌মোদ‌নে জা‌রি হ‌বে জরু‌রি অবস্থা। এ-সংক্রান্ত ম‌ন্ত্রিসভার বৈঠ‌কে উপ‌স্থিত থাক‌বেন বি‌রোধীদলীয় নেতা বা উপ‌নেতা।

রোববার (১৩ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১২তম দিনে এই ঐকমত্যে পৌঁছায় দলগুলো।

এতে সিদ্ধান্ত হয়, নাগরিকের দুটো অধিকার অলঙ্ঘনীয় করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৪৭ (৩) এর বিধান সাপেক্ষে কোনো নাগরিকের জীবন অধিকার, নির্যাতন ও নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণে বা শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার খর্ব করা যাবে না।

জরুরি অবস্থা ঘোষণার বিষয়ে সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়েছে, ১৪১ এর ক এর ১ ধারা মতে রাষ্ট্রপতির কাছে যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরি অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে, যা যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের দ্বারা বাংলাদেশ বা যেকোনো অংশের নিরাপত্তার বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তা হলে তিনি অনধিক ৯০ দিনের জন্য জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। তবে বৈধতার জন্য জরু‌রি অবস্থা ঘোষণার আগে মন্ত্রিসভার লিখিত অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। 

একই সঙ্গে জরুরি অবস্থা ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে। জরুরি অবস্থা নিয়ে গত ৭ ও ১০ জুলাই আলোচনা হয়। তার প্রেক্ষিতে রোববারের আলোচনায় বলা হয়, বিদ্যমান ১৪১ (ক) সংশোধনের সময় অভ্যন্তরীণ গোলযোগের শব্দগুলির পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় অখন্ডতার প্রতি হুমকি বা মহামারি বা প্রাকিৃতিক দুযোগ শব্দগুলি প্রতিস্থাপন হবে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করা।

সংলাপে জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিমত দেখা যায়।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মন্ত্রিসভার পরিবর্তে সর্বদলীয় বৈঠক হতে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আহমদ আবদুল কাদের মন্ত্রিসভার সঙ্গে বিরোধী দলকে যুক্ত করা প্রস্তাব দেন।

আলোচনার এক পর্যায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জরুরি অবস্থা নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধী দলীয় নেতা বা নেত্রীর উপস্থিতি নিশ্চিতের প্রস্তাব করেন। যাতে সমর্থন জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। পরে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বিরোধী দলীয় নেতা না থাকলে কে উপস্থিত থাকবেন তা নিয়ে কথা বলেন। তিনি সে সুযোগ রাখার প্রস্তাব করেন।

এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানান বিরোধী দলীয় উপনেতাও মন্ত্রী পদ মর্যাদার। পরে সিদ্ধান্ত হয়, জরুরি অবস্থা ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি স্বাক্ষরের পরিবর্তে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের বিধান যুক্ত করা। মন্ত্রীসভার বৈঠকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বা নেত্রী বা তার অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলীয় উপনেতা উপস্থিত থাকেবেন।

আজকের সংলাপে আপাতত জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে জন রায়ের ভিত্তিতে পরবর্তীতে প্রথম দুইজনের মধ্যে একজনকে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

 

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #জরুরি অবস্থা