বিনোদন

এক সিনেমার জাদুতে বদলে গেল ক্লাসরুমের সংজ্ঞা

বিনোদন ডেস্ক

স্কুলজীবনে ‘ব্যাক বেঞ্চার’ শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু চঞ্চল মুখ, একটু বেয়াড়া মন, আর শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরক্ত দৃষ্টি। শেষ বেঞ্চ যেন ছিল এক ‘নিষিদ্ধ রাজ্য’, যেখানকার বাসিন্দারা হতো ক্লাসের সবচেয়ে কম মূল্যায়িত চরিত্র। কিন্তু যদি বলি, সেই শেষ বেঞ্চই হয়ে উঠছে সামাজিক সমতার প্রতীক?

এই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে এক মালয়ালম সিনেমা— ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’।

২০২৪ সালের নভেম্বরে মুক্তি পাওয়া পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথন এর প্রথম চলচ্চিত্র ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ ইতোমধ্যেই মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে ছাপ রেখেছে। তবে শুধু সিনেমার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয় এর প্রভাব— কেরালা ও পাঞ্জাবের বেশ কিছু স্কুলে এখন শ্রেণিকক্ষে চালু হয়েছে নতুন বসার পদ্ধতি, যেখানে কেউ আর ‘ব্যাক বেঞ্চার’ নয়। সবাই ফার্স্ট বেঞ্চার।

সিনেমার শেষ দৃশ্যে দেখানো হয়, একটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা গোলাকারে বসে আছে। সামনের-পেছনের বিভেদ নেই। সবাই শিক্ষককে ঘিরে, সবাই একক কেন্দ্রে। এই এক টুকরো সিনেমাটিক মুহূর্তই যেন বাস্তবের শ্রেণিকক্ষে এক ‘শিক্ষা-দর্শনের বিপ্লব’ ডেকে আনলো।

কেরালার অন্তত ছয়টি স্কুল এবং পাঞ্জাবের একটি স্কুল ইতোমধ্যেই এ পদ্ধতিতে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। পরপর লম্বা বেঞ্চ নয়, বরং অর্ধবৃত্ত বা ‘U’ আকৃতিতে বসছে শিক্ষার্থীরা— যাতে শিক্ষক সবার সঙ্গে চোখ মিলিয়ে কথা বলতে পারেন, আর প্রত্যেক শিক্ষার্থীও সমানভাবে প্রশ্ন করতে পারে।

পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথন জানান, “চলচ্চিত্র সমাজে পরিবর্তন আনতে পারে, এটা আমি বিশ্বাস করতাম। কিন্তু আমার প্রথম সিনেমাতেই এর এত বাস্তব প্রভাব পড়বে, তা ভাবিনি।”

তিনি জানান, ২০১৪ সালের তামিল সিনেমা ‘কাকা মুট্টাই’ তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল শিশুদের নিয়ে অর্থবহ কিছু বানাতে। আর সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’— চারজন দুষ্টু ছাত্রের গল্প, যাদের জায়গা ছিল কেবল ক্লাসের শেষ সারিতে।

‘ব্যাক বেঞ্চার’ শব্দটার সঙ্গে প্রায়ই জুড়ে দেওয়া হয় অবাধ্যতা, পড়াশোনায় অনাগ্রহ কিংবা শৃঙ্খলার অভাব। অথচ আজকের সফল মানুষদের অনেকেই এক সময় ছিলেন সেই ‘ব্যাক বেঞ্চার’।

এ সিনেমা সেই প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলছে— "ক্লাসে কেউ পেছনে বসে মানেই সে পিছিয়ে নেই। বরং পেছনে বসানো মানেই তাকে পিছিয়ে দেওয়া।"

ভালাকম, কন্নুর, ত্রিশুর, পালাক্কড়— কেরালার এসব অঞ্চলের স্কুলের শ্রেণিকক্ষ এখন দেখতে অন্যরকম। সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই নতুন ক্লাসরুমগুলোর ছবি, যেগুলোতে শিক্ষার্থীরা আর পিছনে বসে নেই— কারণ পিছনে বলে কিছু নেই।

এই দৃশ্যগুলো পরিচালক বিনেশ নিজেই শেয়ার করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়, গর্বের সঙ্গে লিখছেন—

“এটাই সিনেমার আসল জয়।”

 

এসি//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #ব্যাক বেঞ্চার #স্থানার্থী শ্রীকুট্টন #পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথন