পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ধনিপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন একটি সড়কের কার্পেটিং হাত দিয়েই তুলে ফেলা যাচ্ছে—এমন চিত্র প্রকাশ্যে আসতেই এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কাজের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দেন। এ সময় উত্তেজনার মধ্যে এলজিইডির একজন কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনাও ঘটে।
শনিবার (০২ আগস্ট) দুপুরে ঘটনাটি ঘটে ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ধনিপাড়া এলাকায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়ক থেকে গাইঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের দায়িত্ব পায় ‘এমআর ট্রেডার্স’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি ছিল ২০২০-২১ অর্থবছরের আওতায়। তবে শুরু থেকেই রাস্তার মান নিয়ে এলাকাবাসীর সন্দেহ ছিল।
এলাকাবাসীরা জানায় নির্মাণকাজে একাধিকবার অনিয়ম ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শনিবার আবারো যখন কার্পেটিং শুরু হয়, তখন এক যুবক কাজ দেখতে গিয়ে হাতে দিয়েই তুলে ফেলেন রাস্তায় নতুন লাগানো কার্পেটিং। বিষয়টি দেখেই তিনি প্রতিবাদ করেন, কিন্তু ঠিকাদার পক্ষের লোকজন তাকে ভয় দেখায়—পুলিশে দেওয়ার হুমকিও দেয়।
পরে আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে প্রতিবাদ শুরু করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের বিক্ষোভে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত এলজিইডির কার্যসহকারী জাহিদুল ইসলামকে মারধর করেন। প্রাণ বাঁচাতে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমি ভ্যান নিয়ে যাচ্ছিলাম, দেখি নতুন কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। ঠিকাদারের লোকজন বলছে, হাতুড়ি দিয়ে ঠিক করতে হবে! এমন কাজ আমরা মেনে নিতে পারি না।’
অন্যদিকে প্রতিবাদকারী মাসুদ রানা বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কাদা ছিল। সেই কাদা পরিষ্কার না করেই তারা কার্পেটিং শুরু করে। আমি বলতেই তারা ভয় দেখায়, ভিডিও তোলে। তখন আমরা সবাই মিলে কাজ বন্ধ করি।’
এ নিয়ে সড়ক নির্মাণে নিযুক্ত মিস্ত্রি আবুল কালামও অনিয়মের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে কিছু বালু জমে ছিল, পরিষ্কার না করেই কার্পেটিং করা হয়। এটা ভুল হয়েছে।’
স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, ‘এই রাস্তাটির কাজ অনেকদিন ধরে ঝুলে আছে। আগের বারেও কাজ বন্ধ হয়েছিল। এবারও এসে দেখি মান খুব খারাপ, আমি নিজেই কাজ বন্ধ করে দিই।’
এদিকে মারধরের শিকার কার্যসহকারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কেবল তদারকি করতে গিয়েছিলাম। সাংবাদিকদের বলেছিলাম, কাজ নিয়মমাফিক হচ্ছে। এরপরেই কিছু লোক আমার ওপর চড়াও হয়।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এমআর ট্রেডার্স’-এর প্রতিনিধি মিজানুর ইসলাম ফোনকলে বলেন, ‘আমি সাব-ঠিকাদার হিসেবে যুক্ত। এটা ২০২০-২১ সালের প্রকল্প। বিস্তারিত মনে নেই।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।
পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান বলেন, রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করেছে বলেও শুনেছি। তবে কোনো কর্মকর্তা গণপিটুনির শিকার হয়েছেন এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এমএ//