আখরোট অথবা ইংরেজিতে "ওয়ালনাট" একটি ছোট বাদাম হলেও এর পুষ্টিগুণের দিকে নজর দিলে এটি "সুপারফুড" হিসেবে বিবেচিত। প্রাচীনকাল থেকেই আখরোটের নানা উপকারিতা জানা যায়। আধুনিক বিজ্ঞানও এই বাদামটির অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রমাণ করেছে। আজকাল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের জন্য এটি একটি অপরিহার্য খাবার হিসেবে পরিগণিত।
আখরোটের পুষ্টিগত মান
আখরোটের পুষ্টিগুণের কথা বলতে গেলে এর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা আমাদের শরীরের সঠিক কার্যক্রমে সহায়ক। আখরোটে রয়েছে-
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
আখরোটের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
আখরোটে পাওয়া যায় শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন ভিটামিন E যা কোষের ক্ষতি রোধ করে। এটি ত্বক ও মস্তিষ্কের জন্য বিশেষ উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহের ডিএনএকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যা ঠেকাতে সাহায্য করে।
প্রোটিন এবং ফাইবার
আখরোটে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি যা শরীরের টিস্যু গঠনে সহায়ক। এছাড়া এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার যা পাচনতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখে এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা দূর করে।
ভিটামিন এবং মিনারেলস
আখরোটে নানা গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন (যেমন B6, ফোলেট, ভিটামিন E) এবং মিনারেল (ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক) রয়েছে। এগুলি হাড়ের স্বাস্থ্য, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, এবং সঠিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়ক।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
আখরোটের নিয়মিত সেবন শরীরের জন্য অমূল্য উপকারে আসে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য গবেষণায় আখরোটের ভিন্ন ভিন্ন উপকারিতা তুলে ধরা হয়েছে যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিম্নরূপ :
হৃদরোগ প্রতিরোধে
আখরোটে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে ফলে হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যায়। নিয়মিত আখরোট খেলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি
আখরোটের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের জন্য বেশ উপকারী। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্রম বজায় রাখে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং নিউরোলজিক্যাল রোগ যেমন-আলঝেইমার, ঠেকাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আখরোট খেলে মনোযোগ এবং শেখার ক্ষমতা বাড়ে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
আখরোটে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি ক্ষুধার অনুভূতি কমিয়ে দেয় এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্ন্যাকিং প্রতিরোধ করে। ফলে এটি ওজন কমানোর জন্য কার্যকরী হতে পারে। তবে যেহেতু আখরোটে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি তাই একে সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
আখরোটের গঠন অনুযায়ী এটি রক্তে শর্করা (গ্লুকোজ) নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভালো চর্বি এবং ফাইবার ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আখরোট খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী
আখরোটে থাকা ভিটামিন E ত্বক এবং চুলের জন্য বিশেষ উপকারী। এটি ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করে এবং বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। চুলের বৃদ্ধির জন্যও এটি বিশেষভাবে কার্যকরী। নিয়মিত আখরোট খেলে চুল স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল থাকে।
হজমের উন্নতি
আখরোটে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকরী এবং পাচনতন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে।
আখরোট খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
আখরোট সঠিকভাবে খাওয়ার মাধ্যমে এর উপকারিতা সর্বাধিক পাওয়া যায়। সাধারণত প্রতিদিন ৬-৮টি আখরোট খাওয়া উপকারী। তবে অনেকেই আখরোটের অ্যালার্জি সমস্যায় ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আখরোট বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। সেটি হতে পারে সরাসরি খাওয়া, সালাদে যোগ করা, স্মুদি বা দইয়ের সঙ্গে মেশানো অথবা, পিঠা বা মিষ্টান্নে ব্যবহার করা।
আখরোট শক্তিশালী সুপারফুড যা আমাদের শরীরের জন্য একাধিক উপকারী গুণ প্রদান করে। এটি শুধু হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো বড় রোগের প্রতিরোধকই নয় মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য এবং শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে অতিরিক্ত আখরোট খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এতে অনেক পরিমাণ ক্যালোরি রয়েছে।
এসকে//