আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়ে হুমকি দিয়েছেন ব্রিটিশ-ইসরায়েলি আইনজীবী নিকোলাস কফম্যান।
বুধবার (১৬ জুলাই) মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই’র এক এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, করিম খানকে সরাসরি বলা হয়েছিল—ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম বন্ধ না করলে তাকে ও আদালতকে “ধ্বংস” করা হবে।
প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১ মে হেগের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে কফম্যান জানান, তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আইনি উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং “অনুমোদিতভাবে” করিম খানকে একটি প্রস্তাব দিতে এসেছেন। প্রস্তাব ছিল, নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে জারিকৃত পরোয়ানাসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য গোপনীয় শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক, যাতে ইসরায়েল সেগুলো গোপনে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
তবে কফম্যান সতর্ক করে বলেন, যদি আরও পরোয়ানা জারির চেষ্টা করা হয়—বিশেষ করে উগ্রপন্থী মন্ত্রী ইটামার বেন গিভির ও বেজালেল স্মোটরিচের বিরুদ্ধে—তাহলে "সব ধরনের বিকল্প বন্ধ হয়ে যাবে", এবং "তারা তোমাকে এবং আদালতকে ধ্বংস করবে"।
প্রসঙ্গত, বৈঠকে করিম খানের সঙ্গে তার স্ত্রী ও আইসিসির আইনজীবী শ্যামালা আলাগেন্দ্রাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “এটা ছিল একেবারে পরিষ্কার হুমকি।”
নিকোলাস কফম্যান পরবর্তীতে মিডল ইস্ট আই–কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তার বক্তব্য হুমকি ছিল না এবং তিনি কারো পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না।
এদিকে, করিম খানের বিরুদ্ধে বৈঠকের ঠিক দুই সপ্তাহ পর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এ একাধিক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠে আসে, যার ভিত্তিতে তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে যান। অভিযোগের সত্যতা নিয়ে তদন্ত চলছে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকেও করিম খানের ওপর চাপ বাড়ে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ফোনে জানিয়ে দেন, ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হলে যুক্তরাজ্য আইসিসির তহবিল বন্ধ করে দিতে পারে। একইভাবে মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম হুমকি দেন, আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
আইসিসি ইতোমধ্যে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। করিম খানের ভিসা বাতিল, ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং তার পরিবারের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এই সংকট শুধু একটি মামলার বিষয় নয়—এটি বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নীতির ওপরই বড় ধরনের আঘাত।
এসি//