এক সময় যে কাজ ছিল আনন্দের, এখন সেটাই কাঁধের উপর পাহাড়ের মতো। প্রতিদিন ঘুম ভাঙে ক্লান্তি নিয়ে, আর রাতে ঘুম আসে না। আপনি কি জানেন—আপনি হয়তো শুধু ক্লান্ত নন, আপনি বার্নআউটের শিকার।
শব্দটা হয়ত নতুন, কিন্তু অনুভূতিটা কি চিরচেনা? ‘বার্নআউট’—এ যেন এক নিঃশব্দ দহন। বাইরে থেকে আপনি ঠিকঠাক, ভেতরে কোথাও একটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।
ক্লান্তি নাকি নিঃশেষ? পার্থক্য কোথায়?
সাধারণ ক্লান্তি হলে এক রাত ভালো ঘুম বা ছোট্ট একটা ছুটি শরীর-মনকে চাঙ্গা করে দেয়। কিন্তু বার্নআউট? তা শুধু শরীর নয়, মনকেও নিঃশেষ করে দেয়। কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যায়, আত্মবিশ্বাসে ভাঙন ধরে, জীবনের উদ্দেশ্যই যেন অস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ইনকোরা হেলথের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মারজোরি জেনকিন্স বলেন, “বার্নআউট আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি করে, উদ্দীপনা নষ্ট করে এবং মানসিক সুস্থতাকে ধ্বংস করে।”
বার্নআউটের শিকলে বাঁধা মস্তিষ্ক
২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদী বার্নআউটে মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। অ্যামিগডালা হয়ে ওঠে অতিসক্রিয়, যার ফলে উদ্বেগ বাড়ে, মন হয় অস্থির। মস্তিষ্কের চাপ সহ্য করার ব্যবস্থাই ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে।
কেভিন জে.পি. উডস, ব্রেইন.এফএম-এর সায়েন্স ডিরেক্টর বলেন, “বার্নআউট মানে মস্তিষ্কের চাপ ব্যবস্থাপনার ভেঙে পড়া।”
কে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?
বার্নআউটের ছায়া সবচেয়ে বেশি পড়ে জরুরি পরিষেবা, শিক্ষা, সাংবাদিকতা, স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্তদের ওপর। তারা প্রতিনিয়ত চাপে কাজ করেন, বহুক্ষেত্রে মানসিক সমর্থন ছাড়াই।
এছাড়া কেয়ারগিভার, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও যাঁরা বৈষম্যের শিকার—তাঁদের মাঝেও বার্নআউটের প্রকোপ দেখা দেয়।
পুনরুদ্ধারের পথ: ক্লান্তি থেকে প্রাণ ফিরে পাওয়ার যাত্রা
বার্নআউট কাটানো কোনো ম্যাজিক নয়। লাগে সময়, সচেতনতা আর যত্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন-
নিয়মিত ঘুম
হালকা ব্যায়াম
৯০ মিনিট পরপর বিরতি
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা
এই অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে আমাদের মন ও মস্তিষ্ককে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে।
শেষ কথা: আগুন নিভুক, জীবন ফিরে পাক
আপনি যদি বারবার ক্লান্ত, নিরুৎসাহ, একা বা বিচ্ছিন্ন অনুভব করেন, তাহলে নিজেকে একবার জিজ্ঞেস করুন—‘আমি কি শুধুই ক্লান্ত, নাকি জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ?’
বার্নআউট কোনো দুর্বলতা নয়, এটি একটি বাস্তব সমস্যা। সময় থাকতেই বুঝুন, নিজের প্রতি সদয় হোন। প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে দ্বিধা করবেন না।
সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন
এসি//