জাতীয়

সাধারণ পরিবার থেকে যেভাবে রাজনীতির ময়দানে তারকা হয়ে ওঠেন হাদি

শরিফ ওসমান হাদি। ওসমান হাদি নামেই তিনি পরিচিত। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র এবং ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ প্রার্থী রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করলেও হাদির পথচলা শুরু হয়েছিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির পরিসরে।

ওসমান হাদি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পেশায় একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্থানীয় ইমাম। ভাইবোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হাদি। তিনি প্রাথমিক থেকে আলিম পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়া করেছেন।

হাদি তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায়, যেখানে তিনি আলিম পরীক্ষা সম্পন্ন করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।

হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাষ্ট্র, ক্ষমতা ও সমাজএই বিষয়গুলো তাঁর চিন্তা ও কাজের কেন্দ্রে ছিল শুরু থেকেই।
মাদ্রাসায় পড়ালেখা করা হাদির ভাষা ও পোশাকের কারণে অনেকেই তাঁকে কোনো একটি রাজনৈতিক বা আদর্শিক শিবিরের সঙ্গে যুক্ত মনে করতেন। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের আগে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। সে সময় তিনি মূলত সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ
করতেন এবং একাধিক বইও লিখেছেন।

এক সময় তিনি সাইফুরস কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন।

তবে তার জীবনের গতিপথে বড় পরিবর্তন আসে জুলাই আন্দোলনের সময়। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই হাদি রাজনীতিতে সরাসরি পরিচিত হতে শুরু করেন।

২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার ভূমিকার কারণে তিনি আরও বেশি পরিচিত হয়ে ওঠেন। গড়ে ওঠে তোলেন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম—‘ইনকিলাব মঞ্চ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ আন্দোলনের একজন পরিচিত মুখ হিসেবে তিনি সামনে আসেন। তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং তীব্র ভাষার বক্তব্য ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

সাম্প্রতিক সময়ে ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন। নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিনি মনোযোগ দিয়েছিলেন জনসংযোগে।

জনসংযোগের সময়,গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদে লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি ছিল। পরিকল্পনা ছিলএরপর সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
একত্র হয়ে মধ্যাহ্নভোজ ও আলোচনা করবেন।

কিন্তু হঠাৎই পরিস্থিতি বদলে যায়। একটি অচেনা মোটরসাইকেল থেকে হাদির ওপর
গুলি চালানো হয়। গুলি তাঁর মাথার ডান দিক দিয়ে প্রবেশ করে বাম কানের নিচ দিয়ে বের হয়ে যায়। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

এরপরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গেলো ১৫ ডিসেম্বর বিমান যোগে হাদিকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

 

আই/এ


এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #হাদি