থাইল্যান্ডে ‘মিস ইউনিভার্স ২০২৫’-এর ৭৪তম আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তানজিয়া জামান মিথিলা। এই অনুষ্ঠানের বিশেষ একটি সেগমেন্ট ‘ন্যাশনাল কস্টিউম রাউন্ড’, যেখানে প্রতিযোগীদের হাঁটতে হবে নিজ নিজ দেশের ন্যাশনাল কস্টিউম পড়ে। মিথিলা বাংলাদেশের নারীদের প্রধান পোশাক শাড়িকে বেছে নিয়েছেন ন্যাশনাল কস্টিউম হিসেবে আর দেশের ঐতিহ্য বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে পছন্দ করেছেন সাদা জামদানি।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) ন্যাশনাল কস্টিউম রাউন্ডে ১২১ দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে নিজ দেশের রূপ-ঐতিহ্য তুলে ধরেন তিনি।
এই জামদানি শাড়ির মোটিফে রয়েছে জাতীয় ফুল শাপলা। ‘দ্য কুইন অব বেঙ্গল’ শিরোনামে সামাজিকমাধ্যমে নিজের কস্টিউম শেয়ার করেন তিনি। মিথিলা ক্যাপশনে এই মোটিফ বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে লিখেছেন, ‘শাপলা এই মাটির শান্তি, পবিত্রতা ও অপরাজেয় মনোভাবের প্রতীক। এই বিশেষ জামদানি শাড়িটি পুরোপুরি হাতে তৈরি করা, বানাতে সময় লেগেছে প্রায় ১২০ দিন। শাড়িটির ডিজাইনার আফরিনা সাদিয়া সৈয়দা।’

ডিজাইনার আফরিনা সাদিয়া সৈয়দা জানান, ‘জামদানি শড়িটি আমরা ১৫০ কাউন্ট খাদি সুতির সুতা দিয়ে তৈরি করেছি। মিথিলা চেয়েছিলেন এমন একটা থিম, যেটা বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবে। এটা মাথায় রেখে কয়েকটা থিম দেখাই। শাপলা ফুলের মোটিফ দিয়ে শাড়িটা ডিজাইন বেছে নেওয়া হলে সেটা ডিজাইন করি। সবাই ডিজাইনটা খুবই পছন্দ করেছে।’
শাড়ির পাশাপাশি নজর কেড়েছে মিথিলার বিশেষভাবে তৈরি জুয়েলারি ব্লাউজ ও গয়নাগুলোও। শাপলা মোটিফের সঙ্গে মিল রেখে মিথিলার গহনাতেও যোগ করা হয়েছে একই নকশা। যা তৈরি করেছেন ‘সিক্স ইয়ার্ড স্টোরি’র লরা খান।
এই গয়নার পুরো সেটটি বানাতে লেগেছে আড়াই মাস। কাজ করেছেন ১২ জন কারিগর। মিথিলা চেয়েছিলেন সাদা জামদানির সঙ্গে পুরো গয়নায় থাকবে সোনালি লুক।
সিক্স ইয়ার্ড স্টোরির স্বত্বাধিকারী জেরিন তাসনিম খান গণমাধ্যমকে জানান, ‘২২ ক্যারেট সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়েছে পুরো গয়নায়। টিকলি, চোকার, ঝুমকা, বালা, মোটা চূড়া, রতনচূড়, বাজু, বিছা, চাবির গোছা, আঁচলের ওপর বসানো গয়নার সবকিছুতেই শাপলার থিম। গলার হারের ঝুলে থাকা সবুজ পাথরগুলো শাপলা পাতার রং থেকে অনুপ্রাণিত।’

প্রথমবারের মতো জুয়েলারি ব্লাউজ বানানোর অভিজ্ঞতাও অন্য রকম বলে জানান জেরিন । মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে যাওয়ার আগে ন্যাশনাল কস্টিউম লুক সেট করার দিন রাত ১২টার দিকে মিথিলার সঙ্গে পুরো একটা টিম নিয়ে ফাইনাল করেন ব্লাউজের কাজ। কারিগরকে নিয়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে সবুজ ইনারের ওপর ব্লাউজে গয়না বসানোর কাজ শেষ করেন তিনি।
জামদানি শুধু পোশাক নয়, এটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক গৌরবের প্রতীক। ২০১৩ সালে ইউনেস্কো জামদানিকে অমূল্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মিথিলার ন্যাশনাল কস্টিউম সেই ঐতিহ্যই নতুনভাবে তুলে ধরল বিশ্বমঞ্চে।
আগামী শুক্রবার (২১ নভেম্বর) জানা যাবে, এ বছরের মিস ইউনিভার্সের মুকুট কার মাথায় উঠছে। তবে ন্যাশনাল কস্টিউম রাউন্ডে মিথিলার উপস্থিতি ই্তোমধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্ব কাতারে গর্বিত করেছে।
এসএইচ//