আইন-বিচার

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ

বায়ান্ন প্রতিবেদন

জুলাই গণআন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার মামলায় এই দণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার সম্পদও বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই দন্ডাদেশ ঘোষণা করেন। ৬টি অধ্যায়ের ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

গেল ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ (১৭ নভেম্বর) দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গত ২৩ অক্টোবর এ মামলায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন।  তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীসহ হেভিওয়েট নেতারা যেভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হয়েছিলেন সেসব দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে আসামীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্থদের দেয়ার আবেদন করেন তিনি। পরে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর বিভিন্ন যুক্তির কয়েকটি বিষয়ে জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এরপর তাদের কিছু কথার পাল্টা উত্তর দেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন।

এ মামলার অন্যতম আসামী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি চায়ি। তবে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলো। মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ তার অ্যাকুইটাল (খালাস) চেয়েছেন। 

এ মামলায় মোট ছিলেন ৮৪ জন। তাদের ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় গেল ৩ আগস্ট। প্রথম সাক্ষী ছিলেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। তিনি হিসেবে ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বীভৎসতার চিত্র তুলে ধরেন।  ৮ অক্টোবর মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে জেরার মাধ্যমে শেষ হয় সাক্ষ্যগ্রহণের ধাপ। এরপর প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।

এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এগুলো হচ্ছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনা। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭শ’৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র রয়েছে দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার।  জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি দাখিল করা হয়েছে চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার। শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭শ’২৪ পৃষ্ঠার। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলো ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #শেখ হাসিনা #ফাঁসি