ভয়—একটি অদ্ভুত অনুভূতি। যা একদিকে আমাদের রক্ষা করে, অন্যদিকে টানে সেই অজানা অন্ধকারের দিকে। গা ছমছমে কোনো বাড়ি, কাঁপা কাঁপা দরজার শব্দ, কিংবা হঠাৎ অদৃশ্য কোনো ছায়া—সব জানি বানানো, তবুও রোমাঞ্চে শরীর কেঁপে ওঠে। আশ্চর্য হলেও সত্য, মানুষ ভয় পেতে ভালোবাসে! কারণ ভয় কেবল আতঙ্ক নয়, এটি মানসিক প্রশান্তির এক রহস্যময় দরজা খুলে দেয়।
মনোবিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ভীতিকর বা হরর সিনেমা বাস্তব জীবনের উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী কোল্টান স্ক্রিভনারের মতে, “ভয়ঙ্কর গল্প আমাদের মস্তিষ্ককে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত করে।”
তার গবেষণায় দেখা গেছে, হরর সিনেমার দর্শকদের তিন দলে ভাগ করা যায়—‘অ্যাড্রেনালিন জাঙ্কিজ’, যারা ভয়কে রোমাঞ্চ হিসেবে উপভোগ করেন; ‘হোয়াইট নাকলারস’, যারা ভয় জয় করার আনন্দ পান; আর ‘ডার্ক কোপার্স’, যারা ভয়কে বাস্তব জীবনের নিরাপত্তা অনুভবের উপায় মনে করেন।
ডেনমার্কে হওয়া আরেক গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ভৌতিক সিনেমা দেখেন, তারা সংকটময় পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে অনেক স্থির থাকেন। এমনকি কোভিড-১৯ মহামারির সময়ও তাদের মানসিক সহনশীলতা তুলনামূলক বেশি ছিল।
অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্ক মিলারের মতে, ভয়ঙ্কর গল্প মস্তিষ্কের ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা বাড়ায়—যা আমাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে শান্ত থাকতে শেখায়।
শুধু তাই নয়, শিশুদের উদ্বেগ কমাতেও ‘ভয়’ ব্যবহার করা হচ্ছে থেরাপির অংশ হিসেবে।
নেদারল্যান্ডসে তৈরি হয়েছে MindLight নামের এক বিশেষ ভিডিও গেম, যেখানে ভয়কে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিশুরা নিজের মানসিক স্থিতি ফেরাতে শেখে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই গেম খেলা শিশুদের উদ্বেগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
স্ক্রিভনার বলেন, “ভয়ঙ্কর গল্প আমাদের নিরাপদ পরিবেশে ভয় অনুভবের সুযোগ দেয়। এতে আমরা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি, আর বাস্তব জীবনের ভয়—ততটা ভয়ঙ্কর আর লাগে না।”
সূত্র: হেলথ লাইন
এসি//