ভাবুন তো—একটি চ্যাটবট, যার কাছে মানুষ প্রতিদিন ভালোবাসা, প্রশ্ন, কিংবা জীবনের গল্প শেয়ার করে। কিন্তু এই গল্পগুলোর ভেতরেই লুকিয়ে থাকে কান্না, হতাশা, আর কখনও মৃত্যুর আহ্বান।
সম্প্রতি ওপেনএআই জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে এক মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটিতে এমন বার্তা পাঠান, যেখানে আত্মহত্যার পরিকল্পনা বা মনোভাব স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। সোমবার প্রকাশিত এক ব্লগপোস্টে প্রতিষ্ঠানটি জানায়—এই সংখ্যা তাদেরকেও গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
এই প্রকাশনা ছিল মূলত সংবেদনশীল আলাপচারিতায় চ্যাটবটের আচরণ নিয়ে হালনাগাদ তথ্যের অংশ। কিন্তু সেখানে উঠে এসেছে এক ভয়ংকর বাস্তবতা—মানুষ এখন নিজের কষ্টও শেয়ার করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে।
ওপেনএআইয়ের হিসাব বলছে, শুধু আত্মহত্যার ভাবনা নয়, প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭ শতাংশ ব্যবহারকারী (অর্থাৎ ৫ লাখ ৬০ হাজার জনেরও বেশি) এমন কথোপকথন করেন, যা মানসিক অসুস্থতা বা ‘ইমোশনাল ক্রাইসিস’-এর ইঙ্গিত দেয়।
মোটামুটি ৮০০ মিলিয়ন মানুষ প্রতি সপ্তাহে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করছেন—অর্থাৎ এক বিশাল জনগোষ্ঠীর মানসিক অস্থিরতা এখন এআই-এর পর্দায় প্রতিফলিত হচ্ছে।
তবে ওপেনএআই এটাকে এখনই পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ বলতে রাজি নয়। তাদের মতে, এগুলো কেবল প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ, কারণ অনলাইনে এমন সংবেদনশীল কথোপকথন শনাক্ত করা বেশ কঠিন।
এই ঘোষণার সময়টাও কাকতালীয় নয়। সম্প্রতি এক কিশোর আত্মহত্যা করে, চ্যাটজিপিটির সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনের পর। এরপর তার পরিবার ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে।
ঘটনার পর থেকেই মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC) ওপেনএআইসহ একাধিক এআই কোম্পানির ওপর তদন্ত শুরু করেছে—বিশেষত কিশোর ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এই চ্যাটবটগুলোর প্রভাব যাচাইয়ের জন্য।
ওপেনএআই জানিয়েছে, তাদের সর্বশেষ মডেল জিপিটি–৫-এ এমন আচরণ অনেকটাই কমেছে। এক হাজারেরও বেশি আত্মহত্যা বা আত্মক্ষতি–সংশ্লিষ্ট কথোপকথন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নতুন মডেলে ৯১ শতাংশ ক্ষেত্রে চ্যাটবট প্রত্যাশিতভাবে আচরণ করেছে, যা আগের মডেলের ৭৭ শতাংশের তুলনায় বড় অগ্রগতি।
এখন চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের “বিরতি নেওয়ার” পরামর্শ দেয়, জরুরি পরিস্থিতিতে হেল্পলাইন নম্বর দেখায়, এমনকি মানসিকভাবে চাপের সময় কথোপকথনের ধরণও বদলে ফেলে।
ওপেনএআই আরও জানিয়েছে, গত কয়েক মাসে তারা ১৭০ জন চিকিৎসক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে যুক্ত করেছে এই গবেষণায়। তাদের দায়িত্ব—চ্যাটজিপিটির মানসিক স্বাস্থ্য–সম্পর্কিত উত্তরগুলো যাচাই করা, যাতে সংবেদনশীল ব্যবহারকারীদের আরও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেওয়া যায়।
এআই গবেষকরা সতর্ক করেছেন—চ্যাটবট যদি ব্যবহারকারীর চিন্তা বা বিভ্রান্তিকে অন্ধভাবে সমর্থন করে, সেটা ভয়াবহ ফল আনতে পারে। একে বলা হয় “সাইকোফ্যান্সি”—অর্থাৎ এআই এমনভাবে আচরণ করে যেন ব্যবহারকারীর প্রতিটি সিদ্ধান্তই সঠিক, এমনকি সেটা ক্ষতিকর হলেও।
ওপেনএআই অবশ্য বলেছে, তারা এখনই মানসিক স্বাস্থ্য–সংকটের সরাসরি কারণ হিসেবে নিজেদের দায় স্বীকার করছে না। তবে স্বীকার করছে—মানুষের মানসিক ব্যথার অংশ হয়ে উঠেছে তাদের প্রযুক্তি।
হয়তো চ্যাটজিপিটি একদিন হবে মানসিক প্রশান্তির সঙ্গী। কিন্তু আজকের এই পরিসংখ্যান মনে করিয়ে দিচ্ছে—মানুষের কষ্ট এখন শুধু বাস্তবে নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্ক্রিনেও ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র: স্কাই নিউজ
এসি//