দেশজুড়ে

নদ খননের আড়ালে বালু লুট, ফসলিজমি হারাচ্ছেন কৃষকরা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদপাড়ের নারিকেলতলার চর যেন এখন বালুর মরুভূমি। একসময়ের সবুজ ফসলের মাঠ আজ বিরানভূমি। নদ খননের নামে চলছে বালু বাণিজ্য, আর তার আঘাতে বিপর্যস্ত হচ্ছে কৃষকদের জীবন-জমি।

নদ খননের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। উত্তোলিত বালু অপসারণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ইজারা দিয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী একটি চক্র অবৈধভাবে নদ থেকে আরও বালু তুলে বিক্রি করছে। শুধু তাই নয়, উত্তোলিত বালু ফসলি জমিতে স্তূপ করে রাখায় সেসব জমি এখন অকেজো হয়ে পড়ছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বালুর নিচে তাদের জমির উর্বর মাটি কেটে নেয়ায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়া হয়, এমনকি প্রশাসনে অভিযোগ করেও মেলে না কোনো প্রতিকার।

কৃষক আব্দুল লতিফ বলেন, “আগে যতটুকু বালু রেখেছিল, তুলে নিয়েছে। এখন আবার জমি কেটে বালু নিচ্ছে আমাদের জমি শেষ হয়ে যাচ্ছে।’’

আরেক কৃষক গোলাপ মিয়া বলেন, “আগে যারা বালু রাখত তারা টাকা দিত, এখনকারা এক টাকাও দেয় না। উল্টো জমির মাটিই নিয়ে যাচ্ছে।”

স্থানীয়রা জানান, নদ খননের নামে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ঘনফুট বালু তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার আড়ালে চলছে আরও বেশি পরিমাণ বালু তোলার প্রতিযোগিতা।

কৃষক নূর ইসলাম বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে নতুনভাবে অত্যাচার শুরু হয়েছে। বালুর সঙ্গে জমির মাটিও নিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের ধান, গম, বাদামের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

অন্যদিকে, ইজারাদারের অংশীদার মো. রাসেল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, বালু রাখা হচ্ছে শুধু সরকারি খাস জমিতে। আমরা যেভাবে ইজারা পেয়েছি, সেভাবেই কাজ করছি। অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কথা বলছে।”

এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, “নদ খনন হচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্পের আওতায়। ইজারাদাররা কেবল উত্তোলিত বালুই বিক্রি করতে পারবে, অন্য কিছু নয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে, সম্প্রতি অবৈধ উত্তোলনের দায়ে জরিমানাও করা হয়েছে।”

 

এমএ//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #কিশোরগঞ্জ #পাকুন্দিয়া #ব্রহ্মপুত্র #বালু