আন্তর্জাতিক

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দি ‘মারওয়ান বারঘুতি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মারওয়ান বারঘুতি ছবি: সংগৃহীত

গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধের লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনার ফলে ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু একজন ফিলিস্তিনি তালিকা থেকে অনুপস্থিত ছিলেন- মারওয়ান মারওয়ান বারঘুতি, যিনি ফাতাহের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং ইসরাইলের সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল বন্দী। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন ফাতাহ-র এই ঊর্ধ্বতন নেতাকে সমর্থকরা প্রায়ই ‘ফিলিস্তিনি ম্যান্ডেলা’ বলে ডাকেন।

জনমত জরিপ অনুসারে, বারঘুতি হলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ এবং ফিলিস্তিনি সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম বলে মনে করা হয়।

মারওয়ান বারঘুতিকে গত মাসে ইসরাইলি কারারক্ষীরা মারধর করার অভিযোগ উঠার আগ থেকেই তাকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দি হিসেবে দেখা হতো।

৬৬ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি নেতা ইসরাইলের কারাগরে ২৩ বছরেরও বেশি সময় বন্দি রয়েছেন। অনেক ফিলিস্তিনির জন্য তিনি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শেষ আশা। এমনকি বেশ কিছু  ইসরাইলি কর্মকর্তাও বিশ্বাস করেন, এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির চাবিকাঠি তার হাতেই রয়েছে।

গত মাসে, ইসরাইল অজান্তেই এমন একটি কাজ করেছে যা বারঘুতির কিংবদন্তিকে আরও উজ্জ্বল করেছে।

ঠিক কী ঘটেছিল তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে এই সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া পাঁচ ফিলিস্তিনি বন্দির মতে, প্রহরীরা গত ১৪ই সেপ্টেম্বর বারঘুতিকে পিটিয়ে ও লাথি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে। এই হামলায় তার পাঁজরের চারটি হাড় ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ।

বারঘুতির পরিবারের সদস্যরা এই কথিত হামলাকে প্রমাণ হিসেবে দেখছেন যে, ইসরাইল শুধু তাদের সবচেয়ে মূল্যবান ফিলিস্তিনি বন্দিকে আটকে রাখতে নয়, বরং তাকে হত্যা করে ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য নেতাকে সরিয়ে দিতে চায়।

বারঘুতির ছোট ভাই মুকবেল বলেন, আমি আশঙ্কা করছি আমরা তার ধীরগতির হত্যাকাণ্ড দেখছি। তিনি জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে তার ভাইকে সবসময় শক্ত মনোবলের অধিকারী দেখেছেন। কিন্তু ৭ই অক্টোবরের পর থেকে তাকে চারবার মারধর করা হয়েছে।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে জোর দিয়ে বলেছেন, বারঘুতিকে কখনোই শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়নি। তবে, কট্টরপন্থী নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির, যিনি কারাগারে বারঘুতির সাথে দেখা করেছিলেন, তিনি কারাগারের জীবন কতটা কঠিন করে তুলেছেন তা নিয়ে দম্ভ করতে ছাড়েননি।

বেন গভির বলেন, প্রধান সন্ত্রাসী মারওয়ান বারঘুতির করা অভিযোগগুলো মিথ্যা, তবে একই সাথে আমরা গর্বিত যে আমার মেয়াদে বারঘুতির পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বদলে গেছে।

সত্য যাই হোক না কেন, এই অভিযোগগুলো এমন একজন ব্যক্তির ভাবমূর্তিকে কেবল শক্তিশালী করবে, যিনি কারাগারে থেকেও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে পারেন।

হামাস বা তার ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ-এর অন্য কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই জনপ্রিয়তার দিক থেকে তার কাছাকাছি নেই। পোল বা জনমত জরিপ বলছে, যদি ফিলিস্তিনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে বারঘুতি তার নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সম্মিলিত ভোটের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হবেন।

অনেক প্রাক্তন সিনিয়র  ইসরাইলি কর্মকর্তার মতে, বারঘুতির সহিংসতার রেকর্ড যাই থাকুক না কেন,  ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকারের পক্ষে তার চেয়ে স্পষ্টভাষী কোনো ফিলিস্তিনি প্রবক্তা আর দেখা যায়নি।

ইসরাইল ২০০৪ সালে পাঁচজন বেসামরিক নাগরিককে হত্যার আদেশের অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরাইল বেশ কয়েকবার তাকে মুক্তি দেয়ার কাছাকাছি চলেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে গেছে।

গত সপ্তাহে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়, যখন হামাস মুক্তিপণ হিসেবে যে বন্দিদের তালিকা দেয়, সেখানে বারঘুতির নাম শীর্ষে রাখা হয়—যদিও বারঘুতি কখনো হামাসের সদস্য ছিলেন না এবং তাদের আদর্শেরও বিরোধী। ইসরাইল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

এতে প্রশ্ন উঠেছে, মারওয়ান বারঘুতি আসলে কে? তিনি কি একজন ত্রাণকর্তা নাকি খলনায়ক? শান্তির অংশীদার নাকি ধূর্ত প্রতারক? একজন ফিলিস্তিনি ম্যান্ডেলা নাকি ৭ই অক্টোবরের গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ইয়াহইয়া সিনওয়ারের মতো কেউ?

আর তাকে মুক্তি না দিয়ে, ইসরাইল কি একটি সুযোগ হারাচ্ছে নাকি একটি বুলেট এড়াচ্ছে?

 

 সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ

 

এসি//