মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান কার্যকর করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৬৭ সালের পূর্ব সীমারেখা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা গাজায় চলমান সংকটকে ‘মর্মান্তিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘শিশুরা অকাল মৃত্যুবরণ করছে, বেসামরিক মানুষ নির্বিচারে নিহত হচ্ছে, হাসপাতাল ও স্কুলসহ পুরো জনপদ ধ্বংস হচ্ছে। আমাদের চোখের সামনে গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে, কিন্তু মানবজাতি এর অবসানে যথাযথ চেষ্টা করছে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।’
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসও স্মরণ করান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘১৯৭১ সালে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের জন্য আমরা রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করেছি। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে আমরা বারবার ত্যাগ স্বীকার করেছি।’
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তরুণ সমাজ স্বৈরাচার পরাজিত করে ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজের নতুন পথ খুলে দিয়েছে। জনগণ সেই দায়িত্ব বর্তমান সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে।
সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকার সহজ পথ না বেছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। বিচার বিভাগ, শাসনব্যবস্থা, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি দমন ও নারী অধিকারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাতে ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এসব কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গেল জুলাইয়ে সব দল একসঙ্গে ‘জুলাই ঘোষণা’ দিয়েছে, যা সংস্কার কার্যক্রমকে সময়মতো বাস্তবায়নের অঙ্গীকার হিসেবে বিবেচিত।
তিনি আশ্বস্ত করেন, এই অঙ্গীকারের ফলে আগামী নির্বাচনে যে দলই জিতুক না কেন, সংস্কার বাস্তবায়নে কোনো অনিশ্চয়তা থাকবে না। ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর কখনো হুমকির মুখে পড়বে না,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে নাগরিকবান্ধব সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।