কুড়িগ্রামে নাগেশ্বরীতে প্রথম পক্ষের দুই সন্তানকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় পক্ষের দেুই ছেলেকে জমি লিখে দেয়া বৃদ্ধের মরদেহ পুকুরে পাওয়া গেছে। শতবর্ষী ওই বৃদ্ধের নাম বছির উদ্দিন।
শনিবার (৩০ আগস্ট) সকালে নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার শিঙ্গিমারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কচাকাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির পাশের পুকুররে পানির নিচ থেকে মরদেহ তোলেন দ্বিতীয় পক্ষের সন্তান ও স্ত্রী। প্রথম পক্ষের সন্তানদের দাবী বৃদ্ধকে পানিতে ফেলে দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরা হত্যা করেছেন। তবে দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানদের দাবী পুকুরে গরুকে গোসল করাতে গিয়ে তিনি পানিতে পড়ে মারা যান।
জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা থানার বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের শিঙ্গিমারী গ্রামের বছির উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী দুই ছেলে তিন মেয়ে রেখে মারা যায়। পরে বছির দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় পক্ষের দুই ছেলে তিন মেয়ে রয়েছে। তিনি দ্বিতীয় পক্ষের বাড়িতে থাকতেন।
প্রথম পক্ষের দুই ছেলে শাহ জামাল, শাহ আলম ও দ্বিতীয় পক্ষের দুই ছেলে নুর আলম ছক মাল্লিকে চাষাবাদ ও বাড়ি করার জন্য বল্লভের খাষ ইউনিয়নের শিঙ্গিমারী মৌজায় প্রায় তিন একর জমি সমানভাবে ভাগ করে দেন। কিন্ত চলতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসে ওই বৃদ্ধের ২.১১ একর জমি দ্বিতীয় পক্ষের দুই সন্তান লিখে নেয়। জমি লিখে নেয়া বড় ছেলের আবাদী ও মেঝো ছেলের বাড়ির চালাসহ আবাদী জমি সবই চলে যায় ওই দুই ছেলের নামে। এ নিয়ে দুই পক্ষের সন্তানদের মাঝে দ্বন্দ্ব চলছিলো।
ওই বৃদ্ধ দ্বিতীয় পক্ষের বাড়িতে থাকতেন। এ অবস্থায় শনিবার (৩০ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার মরদেহ বাড়ির পিছনে প্রায় ২০গজ দুরের পুকুরের পানিতে পাওয়া যায়।
বৃদ্ধের বড় ছেলে শাহাজামালি বলেন, ‘আমার বাবার বয়স ১শ বছরের উপর তিনি অন্যের সহযোগিতায় চলা ফেরা করেন। আমার সৎ মা ও ছোট ভাইয়েরা তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে ২.১১ একর জমি লিখে নেয়। এর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। বেশ কিছুদিন থেকে স্থানীয়রা বিষয়টি মিমাংসা করে দিতে উদ্যোগ নেন। এর মাঝে আজকে শুনি আমার বাবা পুকুরের পানিতে পড়ে মারা গেছে। তিনি ঠিকমত হাটতে পারে না। তিনি কেমন করে পুকুরপারে গেলেন। এটা পরিকল্পিত ভাবে আমার সৎ মা ও দুই ভাই বাবাকে পানিতে ফেলে মেরে ফেলেছে’।
প্রতিবেশী নুরজামাল বলেন সকালে তাদের বাড়ির সামন দিয়ে যেতে আমি ঝগড়া শুনতে পাই। নুর আলম ছকমাল্লি ও রহিম তার বাবার সাথে ঝগড়া করছেন। কিছুক্ষণ পর তাদের বাড়ির পিছনে পুকুরের অদূরে আমার সবজি ক্ষেতে সবজি তুলতে যাব ফেরার সময় আমি দেখতে পাই তারা তার বাবাকে পুকুর পারে নিয়ে আসছে। আমাকে দেখে তারা দাড়িয়ে যায়। বয়বৃদ্ধ বাবা মাঝে মধ্যে কাপড়ে পয়খানা করেন। আমি ভাবছি তার তা পরিস্কার করতে নিয়ে যাচ্ছে। পরে কিছু সময় বাদে চিৎকার শুনতে পাই য়ে গরু পানিতে পড়ছে। আমি দৌড়ে এসে দেখতে পাই রহিম ও তার মা ছকিনা বেগম বৃদ্ধকে মৃত্যু অবস্থায় পানি থেকে তুলছে। এসময় তার দুই ছেলে নুর আলম ছকমাল্লিকে দৌড়ে পালাতে দেখি।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে ছোট ভাই আব্দুর রহিম বলেন, বাবা নিজে নিজেই গরুকে গোসল করাতে গিয়ে পানিতে পড়ে। এসময় আমি এবং আমার মা বাড়িতে ছিলাম না। পড়ে পুকুর পাড়ে আমার বাবার লুঙ্গি ও সেন্ডেল দেখে পুকুরে নেমে খোজাখুজি করে পানির নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করি। আরেক ভাই নুর আলম বহুদিন থেকে বাড়িতে নেই। তিনি তার মামা শশুরের বাড়িতে থাকে। তার পালনোর কথা ভিত্তিহীন।
তবে বৃদ্ধের মৃত্যুর খবরে দুপুর ২টা পর্যন্ত সকল সন্তান ও আত্মীয় স্বজন আসলেও ছেলে নুর আলম ও ছকমাল্লী আসেন নাই।
এর আগে লিখে নেয়া জমি দখলে নিতে বড় ভাইসহ স্থানীয় অনেকের নামে ৫লাখ টাকার চাদাবাজীর একটি পিটিশন মামলা করে নুর আলম ছকমাল্লী।
ওসি শাহ আলম জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রামে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আই/এ