যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গেল ৪৪ দিনে অন্তত ৪৯৭ বার এই চুক্তি ভেঙেছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪২ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজা সরকারের গণমাধ্যম কার্যালয়। এদের বড় একটি অংশ শিশু, নারী ও প্রবীণ বলে জানা গেছে।
সবশেষ শনিবার (২২ নভেম্বর) গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার বাহিনী। স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে।আহত হয়েছে আরও ৮৭ জন। ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্যে এটিকে সবচেয়ে সাম্প্রতিক বড় লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় দাবি করেছে, গাজার ভেতরে ইসরাইল-নিয়ন্ত্রিত একটি এলাকায় হামাসের এক সদস্য সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এর প্রতিক্রিয়ায় তারা এই অভিযান শুরু করে। ইসরাইল জানিয়েছে, ওই জবাবে তারা হামাসের পাঁচজন সিনিয়র সদস্যকে হত্যা করেছে। তবে এ বিষয়ে হামাস তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
গাজার উত্তরাঞ্চলে বহু ফিলিস্তিনি পরিবার বর্তমানে “ব্যাপক অবরুদ্ধ” অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের মতে, যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে ইসরাইলি সেনারা আরো ভেতরে অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও বিপদজনক হয়ে উঠছে।
গত মাসে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সময় উভয় পক্ষের মধ্যে একটি “হলুদ রেখা”—ইসরাইলি বাহিনী যেখানে অবস্থান নেবে—এমন একটি অনানুষ্ঠানিক সীমা ঠিক করা হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এই রেখা ইসরাইলকে গাজার অর্ধেকের বেশি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়তা করছে। রেখার কাছে এলে ফিলিস্তিনিদের প্রায়ই গুলি করা হয়, কখনো কখনো প্রাণহানিও ঘটে।
হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরাইল “ইচ্ছাকৃতভাবে” যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং তারা যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোকে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। হামাসের দাবি, ইসরাইল ঠিক করা সীমারেখা অমান্য করে ‘হলুদ রেখা’র বহু পশ্চিমে ঢুকে তাদের অবস্থান বদলে দিচ্ছে—যা কার্যত চুক্তিই পরিবর্তন করার শামিল।
হামাস আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের মধ্যস্থতার অঙ্গীকার রক্ষা করতে হবে এবং যুদ্ধবিরতি নষ্ট করার যেকোনো প্রচেষ্টা ঠেকাতে ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য ইজ্জাত আল-রিশেক বলেন, ইসরাইল বারবার যুদ্ধবিরতি ভেঙেও এখন উল্টো হামাসকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে। ইসরাইল এখন নতুন করে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত খুঁজছে।
এমএ//