পর্দায় তিনি ছিলেন বলিউডের ভয়ঙ্কর খলনায়ক, যার এক চাহনিতেই কেঁপে উঠত নায়করা। কিন্তু আলো–ঝলমলে সেই দুনিয়ার বাইরে বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন গভীরভাবে একা। নাম মহেশ আনন্দ—এক সময়ের জনপ্রিয় মুখ, যিনি অভিনয় করেছেন তিন শতাধিক ছবিতে, প্রেমে পড়েছেন বারবার, কিন্তু শেষ জীবন কাটিয়েছেন নিঃসঙ্গতা আর দারিদ্র্যে।
খলনায়ক থেকে দর্শকের প্রিয় মুখ
আশির দশকের মাঝামাঝি সময় বলিউডে প্রবেশ করেন মহেশ আনন্দ। ১৯৮২ সালে ‘সনম তেরি কসম’ ছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবে প্রথম দেখা গেলেও, বড় পর্দায় নিজের জায়গা করে নিতে সময় লেগেছিল। ১৯৮৮ সালে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ‘শাহেনশাহ’ ছবিই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। সেই ছবির পর থেকেই দর্শক তাঁকে চিনে ফেলেন—এক ভয়ঙ্কর অথচ স্মরণীয় খলনায়ক হিসেবে।
এরপর একে একে ‘গুমরাহ’, ‘গঙ্গা যমুনা সরস্বতী’, ‘তুফান’, ‘স্বর্গ সেগর’, ‘কুলী নাম্বার ওয়ান’, ‘বিজয়পথ’সহ প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। সঞ্জয় দত্ত, গোবিন্দ, অক্ষয় কুমার, সালমান খান, সানি দেওল—সব প্রজন্মের তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন মহেশ। পর্দায় তিনি ছিলেন শক্তিশালী, মাচো আর নির্ভীক, কিন্তু পর্দার বাইরের জীবন ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।
প্রেম, বিয়ে আর ভাঙনের গল্প
মহেশ আনন্দের ব্যক্তিজীবন ছিল বলিউডি নাটকের চেয়েও জটিল। পাঁচটি বিয়ে, এক ডজনেরও বেশি প্রেম—তবু মেলেনি স্থায়ী সুখ। প্রথম স্ত্রী ছিলেন অভিনেত্রী রীনা রায়ের বোন বরখা রায়। এরপর তিনি বিয়ে করেন প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এরিকা মারিয়া ডি’সুজাকে, যাঁর সঙ্গে তাঁর একটি পুত্রসন্তান আছে। পরের বিয়ে মধু মালহোত্রার সঙ্গে, তারপর অভিনেত্রী ঊষা বচ্চনিকে, আর জীবনের শেষ অধ্যায়ে এক রুশ নারী লানার সঙ্গে। সম্পর্কগুলো একে একে ভেঙে যায়, আর মহেশ ক্রমেই ডুবে যান একাকিত্বে।

আলো নিভে যাওয়ার পর
বলিউডে শত শত ছবিতে কাজ করেও শেষ জীবনে তিনি হয়ে পড়েন নিঃস্ব। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “বন্ধুরা বলে আমি মদ্যপ। আমার কোনো পরিবার নেই। সৎভাই ৬ কোটি রুপি প্রতারণা করে নিয়ে গেছে। আমি ৩০০–এর বেশি সিনেমায় কাজ করেছি, কিন্তু এখন পানির বোতল কেনারও টাকা নেই।” সেই লেখাতেই যেন ফুটে উঠেছিল তাঁর ভাঙা মন, হারানো আত্মসম্মান আর নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণা।
শেষ অধ্যায়
অভিনয়ে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন মহেশ। ২০১৯ সালে গোবিন্দর ‘রঙ্গিলা রাজা’ ছবিতে ছোট্ট একটি ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে। কিন্তু সেই ছবির মুক্তির মাত্র ২২ দিন পরই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মুম্বাইয়ের অন্ধেরির ফ্ল্যাটে সোফায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় মহেশ আনন্দকে—পাশেই পড়ে ছিল এক বোতল মদ আর এক প্লেট খাবার। ময়নাতদন্তে জানা যায়, মৃত্যু ঘটেছিল তিন দিন আগেই।
বলিউডের পর্দায় তিনি ছিলেন রক্তচক্ষু খলনায়ক, বাস্তব জীবনে এক পরাজিত নায়ক। আলো–আঁধারের সেই গল্প আজও দর্শকদের মনে এক গভীর বিষাদ জাগিয়ে তোলে—যেন এক চলচ্চিত্র, যার শেষ দৃশ্যটা কেউই দেখতে চায় না।
এসি//