ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় ছবিগুলোর একটি ‘শোলে’। মুক্তির ৫০ বছর পূর্তিকে কেন্দ্র করে ছবিটি নতুন রূপে ফিরে আসছে বড় পর্দায়। সেই পুনর্মুক্তির আগে গতকাল শুক্রবার (০৫ ডিসেম্বর) প্রকাশ হলো ‘শোলে: দ্য ফাইনাল কাট’–এর ট্রেলার। ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ছবিটির পুনর্গঠিত এই সংস্করণ দেখা যাবে বিশ্বর সব প্রেক্ষাগৃহে।
প্রথমবারের মতো অরিজিনাল আনকাট সংস্করণ
এই সংস্করণে রয়েছে এমন সব দৃশ্য, যেগুলো কখনো সাধারণ দর্শকের সামনে আসেনি। ছবিটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে 4K রেজোলিউশন ও ডলবি ৫.১ সাউন্ডে। ট্রেলারের ট্যাগলাইন—“দ্য গ্রেটেস্ট স্টোরি নেভার টোল্ড”। এটাই জানান দিচ্ছে যে রমেশ সিপ্পি নির্মিত ছবিটি এবার সম্পূর্ণ অমলিন রূপে দেখা যাবে।

কাহিনি ও চরিত্রগুলোর নতুন আবহ
রমেশ সিপ্পির পরিচালনায় ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই মহাকাব্যিক ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ঠাকুর বলদেব সিংহ। রামগড় গ্রামে ত্রাস সৃষ্টিকারী কুখ্যাত ডাকাত গব্বর সিংহকে ধরতে তিনি আশ্রয় নেন দুই দুঃসাহসী কিন্তু ছন্নছাড়া যুবকের—বীরু ও জয়। সেই অভিযানের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব, প্রতিশোধ ও মানবিকতার অনন্য বুনন।

নতুন এই ট্রেলারে নতুন করে ঝলমল করে ওঠে জয়-বীরুর সেই কিংবদন্তি বন্ধুত্ব; যেখানে অমিতাভ বচ্চন ও ধর্মেন্দ্রকে দেখা যায় তাদের ‘স্বর্ণযুগ’ রূপে। দেখা মেলে সঞ্জীব কুমারের সংযত অথচ শক্তিশালী ঠাকুর চরিত্রায়ণ, হেমা মালিনীর প্রাণোচ্ছ্বল বাসন্তী, জয়া বচ্চনের নীরব-অনুভূতিময় রাধা এবং আমজাদ খানের ভয়ের স্থায়ী ছাপ রেখে যাওয়া গব্বর সিংহ চরিত্র। সম্প্রতি প্রয়াত ধর্মেন্দ্র ও অসরানির স্মৃতি এই ট্রেলারের প্রকাশে আরও আবেগঘন হয়ে উঠেছে। ছবির এই পুনর্মুক্তি তাদের প্রতি এক নিঃশব্দ শ্রদ্ধা নিবেদনও বটে।
সিপ্পি পরিবারের ঘোষণা: ‘এবারই দেখা যাবে মূল সমাপ্ত’
ট্রেলার উন্মোচনের সময় সিপ্পি ফিল্মসের কর্ণধার শেহজাদ সিপ্পি বলেন,‘এই সংস্করণে আমরা ‘শোলে’কে তার নির্দিষ্ট, মূল রূপে ফিরিয়ে এনেছি। এখানে রয়েছে ছবির আসল সমাপ্তি এবং আর. ডি. বর্মনের আসল সাউন্ডট্র্যাক। বড় পর্দায় দর্শকরা যেটা আগে কখনও দেখেননি, এবার সেটাই দেখতে পাবেন।’

তিন বছরের রিস্টোরেশন—ইতালিতে প্রথম দেখানো হয় আসল সমাপ্তি
ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ও সিপ্পি ফিল্মস—এই দুই প্রতিষ্ঠানের তিন বছরের যৌথ প্রচেষ্টায় সম্পন্ন হয়েছে ছবিটির ডিজিটাল রিস্টোরেশন। এরপর ছবিটির বিশ্ব প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয় ইতালির ইল সিনেমা রিত্রোভাতো উৎসবে। সেখানেই প্রথমবার বড় পর্দায় দেখানো হয় ছবির বহুল আলোচিত আসল সমাপ্তি। যেখানে ঠাকুর বলদেব সিংহ নিজ হাতে গব্বর সিংহকে হত্যা করেন।
১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময় ভারতের সেন্সর বোর্ড নির্মাতাদের বাধ্য করেছিল এই সমাপ্তি পরিবর্তন করতে। ফলে দীর্ঘ ৫০ বছর দর্শকরা আসল ‘শোলে’র শেষ দৃশ্যটি দেখার সুযোগ পাননি।

চলচ্চিত্র ইতিহাসে ‘শোলে’র অবস্থান
সলিম-জাভেদের লেখা এই ছবির বর্ণনায় মিশে আছে পশ্চিমা চলচ্চিত্র-সংস্কৃতির প্রভাব। সার্জিও লিওনে, আকিরা কুরোসাওয়া ও জন স্টারজেসের মত কিংবদন্তি পরিচালকদের ধাঁচ। কিন্তু গল্প বলার ভাষা পুরোপুরি ভারতীয়।
মুক্তির সময় প্রত্যাশিত সাড়া না পেলেও পরে ছবিটি ১৯ বছর ভারতীয় বক্স অফিসে আধিপত্য বজায় রাখে। টানা ৫ বছর চলে মুম্বাইয়ের মিনার্ভা সিনেমায়।
২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ছবিটিকে ঘোষণা করে “ভারতের সেরা চলচ্চিত্র”, আর ১৯৯৯ সালে বিবিসি ইন্ডিয়া একে আখ্যা দেয়-“মিলেনিয়ামের সেরা ছবি”।
আধশতাব্দী পেরিয়ে আবারও আলোচনায়
পাঁচ দশক পরও ‘শোলে’র আবেদন ফুরায়নি। বরং অরিজিনাল আনকাট সংস্করণের ঘোষণা ছবিটিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আবার ফিরিয়ে আনছে। বড় পর্দায় এই ঐতিহাসিক সংস্করণ দেখা এখন শুধু সিনেমাপ্রেমীর নয়, বরং ভারতীয় চলচ্চিত্র ঐতিহ্যের জন্যও এক বিরল অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে।
এসএইচ//