পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঘোষণা করেছেন, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সরকার সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবে। খাইবার পাখতুনখাওয়ায় চলমান সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময় সন্দেহভাজনদের হামলায় ১৯ সেনা সদস্য নিহত হওয়ার পর শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তিনি এই কঠোর সতর্কবার্তা দেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের সরকারি গণমাধ্যম রেডিও পাকিস্তান।
এর আগে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছিল, খাইবার পাখতুনখাওয়ার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে ১২ সেনা নিহত হয়েছেন। আর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৩ জন।
আইএসপিআর আরও বলেছে, ১০ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর দুই জায়গায় সংঘর্ষে ‘ভারতের মদদপুষ্ট ফিতনা আল খাওয়ারিজ’ গোষ্ঠীর ৩৫ সদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ওই ১৩ জনও আছেন।
পরে আইএসপিআর জানায়, গত বৃহস্পতিবার লোয়ার দির এলাকায় আরও ৭ সেনা নিহত হয়েছেন এবং সেনারা আরও ১০ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছেন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে পাকিস্তান সরকার নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) বোঝাতে ‘ফিতনা আল খাওয়ারিজ’ শব্দ ব্যবহার করে। আবার বেলুচিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকে তারা ‘ফিতনা আল হিন্দুস্তান’ বলে উল্লেখ করে থাকে। এর মধ্য দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে সন্ত্রাস ও অস্থিতিশীলতা তৈরির অভিযোগ তুলে ধরে তারা।
রেডিও পাকিস্তানের খবরে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির পরে বান্নু এলাকা সফর করেন। সেখানে তারা সন্ত্রাসবিরোধী উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। তারা দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে নিহত সেনাদের জানাজাতেও অংশ নেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহবাজ শরিফ আবারও দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছেন যে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই পূর্ণ শক্তি দিয়েই চালিয়ে যাওয়া হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।
শাহবাজের অভিযোগ, পাকিস্তানে হামলাকারীদের নেতা ও পৃষ্ঠপোষকেরা আফগান ভূমিতে অবস্থান করছেন এবং ভারতের সমর্থন পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি বা বিভ্রান্তিকর প্রচারণা পাকিস্তান মেনে নেবে না। যারা সন্ত্রাসীদের সহায়তা করে, তাদের হয়ে সাফাই গায় কিংবা ভারতের ছায়ায় থেকে কাজ করে, তারা মূলত পাকিস্তানের শত্রু এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শাহবাজ শরিফ খাইবার পাখতুনখাওয়ার জনগণসহ গোটা জাতির ঐক্য ও দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। তিনি আশ্বাস দেন, সন্ত্রাস মোকাবিলায় কার্যকর জবাব নিশ্চিত করতে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেবে।
সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সরকারের যুদ্ধবিরতির সমঝোতা ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই সংগঠনটি নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর ওপর হামলা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। চলতি মাসের শুরুতে বান্নুতে আধা-সামরিক বাহিনী ফেডারেল কনস্ট্যাবুলারির (এফসি) সদর দপ্তরে একটি বড় হামলার চেষ্টা নিরাপত্তা বাহিনী ব্যর্থ করে দেয়। ওই ঘটনায় পাঁচজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী ও ছয় সেনা সদস্য নিহত হন। এরপর থেকেই সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করেছে।
এসি//
