কম রক্তচাপ (লো-ব্লাড প্রেসার) বা হাইপোটেনশন এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অনেক মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ কম রক্তচাপের কারণে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছাতে পারে না যার ফলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ক্লান্তি, এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
কারণ এবং প্রভাব
কম রক্তচাপের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:
ডিহাইড্রেশন (শরীরের পানির অভাব): পর্যাপ্ত পানি পান না করা হলে শরীরে পানির ঘাটতি সৃষ্টি হয়, যা রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।
হরমোনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থা, থাইরয়েডের সমস্যা বা অ্যাড্রেনাল গ্লান্ডের অকার্যকরতা রক্তচাপ কমাতে পারে।
অন্যান্য শারীরিক সমস্যা: হার্টের সমস্যা, ইনফেকশন বা রক্তের অভাবও রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে।
খাদ্যাভ্যাসের ত্রুটি: বেশি লবণ বা শর্করা না খাওয়া, খাদ্য গ্রহণের অভাব রক্তচাপ কমানোর কারণ হতে পারে।
লো-প্রেসার কমানোর কার্যকরী পদক্ষেপ
কম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়গুলির ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন:
প্রচুর পানি পান করুন
ডিহাইড্রেশন কমাতে প্রচুর পানি পান করুন। শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। পানি রক্তচাপ বাড়াতে সহায়তা করে এবং শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়।
লবণযুক্ত খাবার খান
লো-প্রেসারের জন্য অতিরিক্ত লবণ খাওয়া উপকারী হতে পারে, তবে এটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। সঠিক পরিমাণ লবণ শরীরের রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
ছোট পরিমাণে খাবার খান
বড় খাবারের পরিবর্তে দিনের বিভিন্ন সময় ছোট খাবার খাওয়া উচিত। এতে রক্তচাপ নিয়মিত থাকে এবং খাবারের পর পর শরীরের বিপাকের প্রক্রিয়া দ্রুত চলে। একটানা বড় খাবার খাওয়ার বদলে ৫-৬টি ছোট খাবার খাওয়া উত্তম।
পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন
ভিটামিন B12, ফোলেট এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, পালংশাক, মাংস, মাছ, টোফু ইত্যাদি খাদ্য রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্য উপকারী। এ ধরনের খাদ্য রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
হালকা ব্যায়াম করুন
ব্লাড সার্কুলেশন (রক্তপ্রবাহ) বৃদ্ধির জন্য হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটাচলা, সাইক্লিং, বা সাঁতার কাটা খুবই কার্যকর। এটি রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
চাপ কমানোর চেষ্টা করুন
মানসিক চাপ বা উদ্বেগ রক্তচাপ কমাতে পারে। তাই, মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং মনকে শান্ত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত ঘুম
প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম আপনার শরীরকে পূর্ণ বিশ্রাম দেয় এবং রক্তচাপের সমস্যা দূর করে।
সুগার, ক্যাফিন বা অ্যালকোহল কম খাওয়া
অতিরিক্ত চিনির খাবার, ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল রক্তচাপ কমানোর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এসব খাওয়া পরিমিত করতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
লো-প্রেসার দীর্ঘস্থায়ী হলে এবং অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা তৈরি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক উপায় এবং চিকিৎসা দিতে পারবেন।
জরুরি চিকিৎসা যখন প্রয়োজন
কম রক্তচাপের ফলে যদি মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি ভাব অথবা দৃষ্টির সমস্যা দেখা দেয়, তবে তা গুরুতর হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন। কম রক্তচাপ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর অবস্থায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসকের সহায়তা নেয়া জরুরি।
সোর্স
• মায়ো ক্লিনিক
• ওয়েবএমডি
• হেলথলাইন
• ন্যাশনাল হার্ট, লাং এবং ব্লাড ইনস্টিটিউট (NHLBI)
এসকে//