২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে একযোগে চারটি সন্ত্রাসী হামলা ঘটে যা বিশ্ব রাজনীতির ধারা সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়। হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা, ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে করেছিল।
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
সেই সকালে নিউইয়র্ক সিটির ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে আঘাত হানে দুটি ছিনতাই করা বিমান যুক্তরাষ্ট্র এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১১ এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ১৭৫। মাত্র ১৭ মিনিটের ব্যবধানে আঘাতের ফলে ভবনগুলো আগুনে জ্বলে ওঠে এবং শীর্ষ তলায় মানুষ আটকে পড়ে। দুই ঘণ্টার মধ্যেই দুই টাওয়ার ধসে যায়।
তৃতীয় বিমান, যুক্তরাষ্ট্র এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৭৭, আঘাত হানে ওয়াশিংটন ডিসির পেন্টাগনে। চতুর্থ বিমান, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৯৩, পেনসিলভানিয়ার শ্যাংক্সভিলে একটি খালি মাঠে বিধ্বস্ত হয়। ধারণা করা হয়, যাত্রীদের সাহসী প্রতিরোধের কারণে হামলাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
এই হামলায় মোট ২,৯৭৭ জন নিহত হন। নিউইয়র্কে প্রাণ হারান ২,৬০৬ জন, যার মধ্যে ৩৪৩ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী এবং ৭২ জন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য। পেন্টাগনে নিহত হন ১২৫ জন। চারটি বিমানের ২৪৬ যাত্রী ও ক্রু প্রাণ হারান।
উদ্ধারকর্মী ও জীবিতদের শরীরে ধূলিকণার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দেখা দেয়। ২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হেলথ প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৫০,০০০ মানুষ ৯/১১ সংক্রান্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮,২০০ এর বেশি মানুষ এই কারণে মারা গেছেন।
হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ধরা হয় খালিদ শেখ মোহাম্মদকে। হামলায় অংশ নেওয়া ১৯ জন ছিনতাইকারী এসেছিলেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও লেবানন থেকে।
হামলার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করেন। আল-কায়েদা নিশ্চিহ্ন এবং ওসামা বিন লাদেনকে ধরার উদ্দেশ্যে। খালিদ শেখ মোহাম্মদ ২০০৩ সালে পাকিস্তানে গ্রেপ্তার হন এবং এখনও গুয়ানতানামো বে-তে বন্দি রয়েছেন। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন অভিযানে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন।
জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারের জন্য গঠন করা হয় ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএ)। কঠোর আইন, যেমন মার্কিন প্যাট্রিয়ট আইন, কার্যকর করা হয়।
আজও নিউইয়র্কে হামলার স্থানে দাঁড়িয়ে আছে ৯/১১ মেমোরিয়াল ও মিউজিয়াম। এখানে গড়ে উঠেছে নতুন ওয়ান ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, যা আগের নর্থ টাওয়ারের চেয়ে উঁচু ১,৭৭৬ ফুট। পেন্টাগনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এক বছরের মধ্যে পুনর্নির্মাণ করা হয় এবং ২০০২ সালের আগস্টে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে ফিরে যান।
এসকে//
