ভারত ও পাকিস্তানের পরিস্থিতির ওপর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিনই নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। রোববার (১৭ আগস্ট) এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ধরে রাখা কঠিন এবং তা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি সবসময় থাকে।
সোমবার (১৮ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি’র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুবিও আবারও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন- ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা রেখেছে। তার ভাষায়, “প্রতিদিনই আমরা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কী ঘটছে সেটির ওপর নজর রাখছি।”
ভারত জানায়, ইসলামাবাদের অনুরোধে মে মাসে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সংঘাতের অবসান ঘটে। তবে পাকিস্তান ট্রাম্পের দাবি সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রকেই কৃতিত্ব দিয়ে আসছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির প্রসঙ্গ টেনে রুবিও বলেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার একমাত্র উপায় হলো দুই পক্ষের সম্মতি। তিনি সতর্ক করেন, যুদ্ধবিরতি দ্রুত ভেঙে যেতে পারে, তাই স্থায়ী শান্তিচুক্তিই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য।
অন্যদিকে, ফক্স বিজনেসকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে রুবিও ফের উল্লেখ করেন ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের কথা। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন শান্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং বিশ্বের যেকোনো স্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে বহুবার দাবি করেছেন—ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি তিনি মধ্যস্থতা করে আনতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি এটিও বলেন, দুই দেশ যুদ্ধ বন্ধ করলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে বড় অঙ্কের বাণিজ্য করবে।
তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংসদে স্পষ্ট করে বলেছেন—‘অপারেশন সিঁদুর থামানোর জন্য কেউ চাপ দেয়নি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করও পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছেন— কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি আসেনি।
অন্যদিকে পাকিস্তান শুরু থেকেই ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিয়ে আসছে এবং ইসলামাবাদে এ প্রচারণা চলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কারণেই সীমান্তে শান্তি ফিরেছে।
এরইমধ্যে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির দু’বার ওয়াশিংটন সফর করেছেন। মার্কিন প্রশাসন ইসলামাবাদকে পাশে টানতে তেল সরবরাহ চুক্তিও ঘোষণা করেছে।
এই দ্বৈত পরিস্থিতিতে ভারতের গুরুত্ব বেড়েছে। কারণ ওয়াশিংটনের জন্য ভারত কেবল পাকিস্তান প্রসঙ্গে নয়, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লি মস্কো থেকে তেল আমদানি করছে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় আছে। তাই মার্কিন কূটনীতি চাইছে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে, একই সঙ্গে পাকিস্তানকেও আংশিকভাবে সন্তুষ্ট রাখতে।
মোটকথা, মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিতে ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ক এখনও সংবেদনশীল। আমেরিকা প্রতিদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট—যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণ দিল্লির সিদ্ধান্ত, কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ নেই।