কাজে ভালো পারফরম্যান্স করছেন, প্রতিষ্ঠানে অবদানও কম নয়। কিন্তু বেতন? অনেক দিন বাড়েনি! এমন পরিস্থিতি কি আপনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে? আসলে কাজের দক্ষতা ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেতন বাড়া স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কিন্তু তা সব সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে না। কখনো কখনো নিজেকেই উদ্যোগ নিতে হয় প্রতিষ্ঠান বা ম্যানেজারের সঙ্গে সরাসরি আলাপ করে। আর সেই আলাপ যদি হয় ভেবেচিন্তে, কৌশলে তবে ফলাফল আপনার পক্ষেই আসতে পারে।
বেতন বাড়ানোর আলোচনা শুরুর আগে নিজেকেই কয়েকটি প্রশ্ন করুন। উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে আলোচনায় যেতে পারেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে:
• শেষ কবে আপনার বেতন বেড়েছিল? এক বছরের বেশি হয়ে গেছে কি?
• কাজের চাপ বা দায়িত্ব কি সম্প্রতি বেড়েছে?
• কোনও পদোন্নতি বা মূল্যায়ন কি আসন্ন?
• আপনি কি সম্প্রতি কোনও ব্যতিক্রমী অর্জনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
এসব প্রশ্নের উত্তর যদি এখনই ‘না’ হয়, তাহলে হয়তো সময়টা একটু আগে তৈরি করে নিতে হবে।
প্রতিষ্ঠান বা ম্যানেজারের সঙ্গে আলোচনা করার আগে আপনাকেই বুঝে নিতে হবে—আপনার বাজারমূল্য এখন কত? আপনি যে পজিশনে আছেন, আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে কি রকম বেতন দেওয়া হচ্ছে?
এ জন্য ঘাঁটতে পারেন LinkedIn, BDJobs, Glassdoor-এর মতো প্ল্যাটফর্ম। বন্ধু বা সহকর্মীদের কাছ থেকেও তথ্য নিতে পারেন।
এরপর নিজের কাজের মূল্যায়ন করুন সংখ্যা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন, আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য কি ধরনের আর্থিক বা কাঠামোগত অবদান রাখছেন।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ বলছে, সঠিক সময়ে আলোচনা না হলে আপনার যুক্তি খাটো হয়ে যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানের বাজেট রিভিউয়ের আগে কয়েক মাস সময় ধরে প্রস্তুতি নিতে পারেন। কোনও বড় অর্জনের পর, বা পারফরম্যান্স অ্যাপ্রেইজালের সময় হলে সেটিই হতে পারে আদর্শ মুহূর্ত।
আরও একটা বিষয় আলোচনায় যেন হঠাৎ আবেগ প্রকাশ না হয়। এটি কোনও দয়ার অনুরোধ নয়; বরং পেশাদার আলোচনার বিষয়।
তাই ম্যানেজারকে লাঞ্চ ব্রেকে, লিফটে কিংবা হঠাৎ দেখলে এই কথা না বলে নির্ধারিত সময় চেয়ে নিন। আলাপ করুন ধীরে-স্থিরে।
আপনার ব্যয়ের চাপ বা বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কথা না বলাই ভালো। বরং কাজের ভিত্তিতে আপনি কতটা ‘ভ্যালু অ্যাড’ করছেন, সেটি তুলে ধরুন।
তুলনা করুন আপনার কাজের পরিধি আগের চেয়ে কতটা বেড়েছে, অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে আপনার অবস্থান কি, এবং প্রতিষ্ঠান কীভাবে আপনার অবদানে উপকৃত হচ্ছে।
সব সময় যে প্রতিষ্ঠান আপনার প্রস্তাব অনুযায়ী বেতন বাড়িয়ে দেবে, তা নয়। তাই বিকল্প চিন্তা থাকাও জরুরি।
যেমন :
• এককালীন বোনাস
• পদোন্নতির আশ্বাস
• অতিরিক্ত ছুটি
• পেশাগত প্রশিক্ষণ বা বিদেশ সফরের সুযোগ
• নতুন দায়িত্ব ও প্রজেক্ট
হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক হান্না রিলে বোলস মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদী পেশাগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা স্বল্পমেয়াদী বেতন বৃদ্ধির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার বক্তব্য কতটা পরিষ্কার ও আত্মবিশ্বাসী হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে প্রস্তুতির ওপর। চাইলে ঘরে বসেই “মক আলোচনা” করতে পারেন বন্ধুকে বসিয়ে মানবসম্পদ কর্মকর্তা সাজিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার অনুশীলন করুন।
আলোচনার পর পরিণতি যা-ই হোক না কেন, প্রতিষ্ঠানকে কিছুটা সময় দিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার। যদি দ্রুত কোনও আপডেট না আসে, ই-মেইলের মাধ্যমে বিষয়টি কৌশলে অনুস্মারক দিতে পারেন।
বেতন বৃদ্ধি চাওয়া কোনও অপরাধ নয়, বরং নিজের মূল্য বোঝানোর সাহস। তবে তা করতে হবে কৌশল, তথ্য ও আত্মবিশ্বাসের সমন্বয়ে। মনে রাখবেন, আপনি প্রতিষ্ঠানের জন্য কি করছেন, সেটিই আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
তাই শুধু ভালো কাজ নয় ভালোভাবে সেটি তুলে ধরাও দরকার।
সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ, হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল, Harvard Kennedy School, LinkedIn, BDJobs
এসকে//