আন্তর্জাতিক

কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হঠাৎ সামরিক বাজেট দ্বিগুণ করছে ফ্রান্স?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা তুঙ্গে, ইউরোপে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মধ্যেও উত্তেজনা কমেনি। তার ওপর দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার তীব্র সংঘাত বিশ্বকে আরও একবার বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এই অবস্থায় বিশ্বব্যাপী ভয় কাজ করছে — যে কোনো অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ হতে পারে ভয়াবহ ধ্বংসের কারণ।

এই অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বহু দেশ নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। সেই তালিকায় এবার নাম লিখিয়েছে ইউরোপের অন্যতম প্রধান পরাশক্তি ফ্রান্সও।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আগামী বছর থেকে সামরিক বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। দুই বছরের জন্য দেশটির সামরিক খাতে বড় ধরনের অর্থ বরাদ্দের পরিকল্পনাও করেছেন তিনি। তার বক্তব্য, ইউরোপ আজ এমন এক ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন, যেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এতটা তীব্র কখনো হয়নি। এই কারণে ফ্রান্সের সামরিক সক্ষমতা শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ম্যাক্রোঁ।

ম্যাক্রোঁ বলেন, এই পৃথিবীতে স্বাধীন থাকতে হলে, ভয় পাওয়াতে হয়। আর ভয় পাওয়াতে হলে, শক্তিশালী হতে হয়। 

সোমবার (১৪ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি‘র প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্যারিসে ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ম্যাক্রোঁ বলেন, আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছি, যেখানে বৈশ্বিক রাজনীতি অত্যন্ত জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছর থেকে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াবে ৩.৫ বিলিয়ন ইউরো ফ্রান্স এবং ২০২৭ সালের মধ্যে আরও ৩ বিলিয়ন ইউরো বৃদ্ধি পাবে। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যেই ফ্রান্সের সামরিক বাজেট দ্বিগুণ করা হবে, যা পূর্ব পরিকল্পনার চেয়ে তিন বছর আগেই বাস্তবায়ন হবে।

বিবিসি বলছে, ২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৩২ বিলিয়ন ইউরো। ম্যাক্রোঁর প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী দুই বছরের মধ্যে বাজেট দাঁড়াবে ৬৪ বিলিয়ন ইউরোতে। তবে এই প্রস্তাব ফরাসি পার্লামেন্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

বাস্তিল দিবসের আগের দিন দেয়া এই বক্তব্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, আজকের পৃথিবী আবারও পারমাণবিক শক্তির প্রতিযোগিতা ও বড় বড় সংঘাতের দিকে ফিরে যাচ্ছে। এই পৃথিবীতে স্বাধীন থাকতে হলে, ভয় পাওয়াতে হয়। আর ভয় পাওয়াতে হলে, শক্তিশালী হতে হয়।

একইসঙ্গে তিনি রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘সাম্রাজ্যবাদী নীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। 

সম্প্রতি সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্ররা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সামরিক খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় করা হবে, যা আগে ছিল ২ শতাংশ। যুক্তরাজ্যও নিজের প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা ঘোষণা করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি বলেছেন, ‘এটি মস্কোতে একটি বার্তা পাঠাবে।’

এদিকে ফরাসি সেনাবাহিনী প্রধান থিয়েরি বারকার্ড গত শুক্রবার বলেন, রাশিয়া ফ্রান্সকে ইউরোপে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে। ইউক্রেনে এখন যা ঘটছে, তার মাধ্যমেই আগামী দিনে ইউরোপের অবস্থান ঠিক হয়ে যাচ্ছে।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #ফ্রান্স #ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ