টানা কয়েকদিনের দুর্ভোগের পর ফেনীর বন্যা পরিস্থিতিতে অবশেষে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। মূল সড়ক থেকে পানি নামতে শুরু করায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় খানিকটা গতি ফিরলেও, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখন ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে।
বন্যার ধাক্কায় ফেনী-পরশুরাম সড়কসহ অনেক এলাকার রাস্তা ভেঙে গেছে। ফলে যান চলাচলে এখনও বিঘ্ন ঘটছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৩টি জায়গায় ভেঙে পড়ায় মোট ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে রোববার (১৩ জুলাই) পর্যন্ত নতুন করে কোনো গ্রামে পানি প্রবেশ করেনি।
জেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানিয়েছে, বন্যায় প্রায় ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা এবং ২ হাজার ৩৫০টিরও বেশি মাছের ঘের ও পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ চলছে, যা পানি পুরোপুরি সরে গেলে জানা যাবে।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে, পাঁচটি উপজেলায় অন্তত ৩৪ হাজার ৬০০ জন মানুষ এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজনের সংখ্যা কমে এখন ৫ হাজার ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান জানান, পুলিশ সদস্যরা বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম ও খাদ্য বিতরণে নিরলসভাবে কাজ করছেন। একইভাবে বিজিবির পক্ষ থেকেও সহায়তা চলছে। ফেনী ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন, তারা দুর্গত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন এবং খাদ্য, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, ফেনী জেলার সিলোনিয়া ও মুহুরী নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও উন্নত হতে পারে।
তবে আগামী তিনদিন মাঝারি থেকে মাঝারি মাত্রার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আবারও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।