জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট দিন : গোলাম পরওয়ার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেছেন, কোনো দলের ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে নব্য ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চাইলে তা প্রতিরোধ করা হবে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত ৮ দলের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে আমরা এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা খবর পাচ্ছি, আমাদের এই আট দলীয় জোট আর আট দলে থাকছে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখন আট দলের এই মিছিলে শরিক হওয়ার জন্য আসছে, এইবার পরিধি আরও বাড়বে’।
তিনি বলেন, ‘আগামীতে আমরা এমন বাংলাদেশ আনতে চাই, এমন সরকার আমরা গড়তে চাই, যেখানে আমরা দুর্নীতিকে ‘না’ বলব, লাল কার্ড দেখাবো। দুর্নীতি চলবে না, সন্ত্রাস চলবে না, ভিন্নমতের ওপরে দমন-পীড়ন চলবে না। আমরা নৈতিক, উৎপাদনমুখী ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমাদের বিপ্লবী তরুণ সমাজকে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করে এই বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকাকে দুনিয়ার সামনে সমুন্নত করব। আমাদের এই আট দলের সম্প্রসারিত জোট আগামী দিনে নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে ইনশাআল্লাহ সাহায্য করবে’।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের ডেট শিডিউল করলেও সেই নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে কিনা—তা নিয়ে এই জাতির সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আন্দোলনে আমরা বলেছিলাম পাঁচ দফার কথা—লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, পিআর পদ্ধতি, জুলাই সনদের স্বীকৃতি, ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার এবং ফ্যাসিস্টরা যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের দৃশ্যমান বিচার। আমরা অনেক দাবি করেছিলাম, আমাদের দাবির আংশিক পূরণ হয়েছে কিন্তু অধিকাংশই এখনো পূরণ হয়নি।
এ জামায়াত নেতা বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা কিছু ব্যক্তিদের কুপরামর্শে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন আর গণভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা বারবার প্রধান উপদেষ্টা এবং কমিশনের প্রধানের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলাম, একই দিনে নির্বাচন হলে কী কী সংকট তৈরি হতে পারে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। আজকে পত্রিকায় এবং অনলাইনে দেখলাম খুলনার আদালত চত্বরে দিনের বেলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে যাওয়ার পথে হামলা করে দুইজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে প্রশাসনে প্রকাশ্যে এভাবে কোর্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়, সেই প্রশাসনের দায়িত্বে নির্বাচনের দিন যে ভোট ডাকাতি হবে না, ভোট কেন্দ্রে হত্যা হবে না, আমাদের জানমাল খুন করে ভোটাধিকার লুট করতে চাইবে না—তার কোনো গ্যারান্টি নাই।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনার, ডিসি, এসপি ও বিচারপতিদেরকে আমি শিক্ষা নিতে বলব। ২০১৪, ১৮ ও ২৪ এর ইলেকশনে যারা ভোট ডাকাতি করে হাসিনাকে দাঁড় করিয়েছিল, সেই নির্বাচন কমিশনকে ডেকে জেলে যেতে হয়েছে। পুলিশের আইজিকে চোখের পানি ফেলতে হয়েছে। বায়তুল মোকাররমের খতিবকেও পালিয়ে যেতে হয়েছে। ডিসিদেরকেও আদালতে যেতে হয়েছে। মনে রাখবেন, এই বাংলার মানুষ ২৪-এ ভোট কাটতে আসলে বা অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাতে চাইলে—এই পরিণতি আপনাদেরও ভোগ করতে হবে।
সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির নেতারা বক্তব্য দেন।
আই/এ