তিন জেলা থেকে ঢাকাগামী বাস বন্ধে চরম ভোগান্তি
শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছেন মালিকরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে হঠাৎ করে কাউন্টার থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণার খবর যারা জানতেন না তারা আজ শুক্রবার সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যান অনেক যাত্রী। অনেকেই বিকল্প পথে নিজ গন্তব্যে যান। তবে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে বাস মালিকদের এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তারা। যাত্রীরা বলছেন, বাস শ্রমিক ও মালিকদের এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা দরকার।
জানা যায়, রাজশাহী থেকে ঢাকায় প্রতি ট্রিপে একজন চালক ১ হাজার ২৫০ টাকা, সুপারভাইজার ৫০০ টাকা এবং সহকারী ৪০০ টাকা পেতেন। সম্প্রতি শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবি তুলে কয়েক দফায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ পরিস্থিতি নিরসনে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমিকপক্ষ ও মালিকপক্ষ বৈঠক বসে। এতে সিদ্ধান্ত হয়, চালকরা ১ হাজার ৭৫০ টাকা, সুপারভাইজাররা ৭৫০ টাকা এবং সহকারীরা ৭০০ টাকা করে পাবেন। গতকাল শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন বেতন কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই মালিকপক্ষ বেশি বেতন দিতে রাজি নয়, জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বাস বন্ধের ঘোষণা দেন।
রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, মালিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর বাড়তি বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বাস্তবায়নের আগে বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে যাত্রীরা যে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শ্রমিকরা বলছেন সব কিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু আমাদের বেতন বাড়েনি। এমন কি বাসের ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমাদের বেতন বাড়ানো হয়নি। সামান্য বেতনে চাকরি করে আমাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। কিন্তু বাস মালিকরা আমাদের এই বিষয়গুলো বুঝতে চাচ্ছেন না। যে বেতন শ্রমিকদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি দিলেও তারা সন্তুষ্ট থাকবেন বলেও মন্তব্য করেন।
এদিকে পূজার ছুটির আগে হঠাৎ বাস বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকই ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন বিকল্প পথে।
বাসে ওঠার জন্য রাজশাহী টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিমন হোসেন। তিনি বলেন, পূজার আগে দুদিনের ছুটিতে এমনিতেই ট্রেন-বাসে প্রচণ্ড ভিড়। এর মধ্যে হঠাৎ বাস বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। আগে জানলে অন্তত বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারতাম।
আরেক যাত্রী পোশাককর্মী শিউলি আক্তার বলেন, শুক্রবার সকালে ঢাকায় কাজে যোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু রাতে কাউন্টারে গিয়ে শুনলাম বাস চলবে না। এখন কীভাবে ঢাকায় যাব, তা বুঝতে পারছি না।
আরেক যাত্রী নাসির উদ্দিন বলেন, শ্রমিক-মালিকদের দ্বন্দ্বে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দ্রুত বাস চালাচল স্বাভাবিক করা উচিৎ।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকেরা দূরপাল্লার বাস যেখানে–সেখানে থামিয়ে যাত্রী তুলতে চাচ্ছে। যাত্রী তুললে তো ব্যবসা করা যাবে না। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে নতুন করে বিরোধ। তারা বাস চালাবেন না বলেছেন। আমরাও বলেছি, ঠিক আছে।
এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ বাস মালিক সমিতির মহাসচিব নজরুল ইসলাম হেলাল বলেন, বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য দুপক্ষের সঙ্গে বসার চেষ্টা করছি। আশা করছি দ্রুত সমস্যাটি সমাধান হবে। বাস চলাচল শুরু হলে বিষয়টা জানানো হবে।
আই/এ