বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) পরিষদের ৫২তম বৈঠকে গৃহীত এই সংশোধনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতে সেবার মান, নিয়ন্ত্রক সংস্থার জবাবদিহিতা এবং রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সংশোধিত অধ্যাদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই ইন্টারনেট বা টেলিযোগাযোগ সেবা বন্ধ করা যাবে না। ধারা ৯৭–এ যুক্ত এই বিধানকে নাগরিকদের যোগাযোগের অধিকার রক্ষায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নতুন কাঠামোর মাধ্যমে ২০১০ সালের বিতর্কিত সংশোধনী থেকে সরে এসে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসির ক্ষমতার ভারসাম্য নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি লাইসেন্স মন্ত্রণালয় স্বাধীন সমীক্ষার ভিত্তিতে অনুমোদন দিলেও, অধিকাংশ লাইসেন্স প্রদানের ক্ষমতা পুনরায় বিটিআরসির হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে একটি জবাবদিহিতা কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।
লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করতে সময় কমানো হয়েছে এবং অতিরিক্ত ও পুনরাবৃত্ত জরিমানার মাত্রা হ্রাস করা হয়েছে। এতে টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ আরও উৎসাহিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন আইনে বিটিআরসিকে প্রতি চার মাসে গণশুনানি আয়োজন এবং সেই কার্যক্রমের অগ্রগতি ওয়েবসাইটে প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত এড়াতে পৃথক আইনি বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় সিম ও ডিভাইস রেজিস্ট্রেশনের তথ্য অপব্যবহার করে নজরদারি বা হয়রানি করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এছাড়া ‘স্পিচ অফেন্স’ সংক্রান্ত ধারায় পরিবর্তন এনে কেবল সহিংসতার উসকানিকেই অপরাধের আওতায় রাখা হয়েছে, যা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
টেলিযোগাযোগ সেবায় আপিল ও সালিশের সুযোগ রাখা হয়েছে এবং নতুন করে ‘সেন্টার ফর ইনফরমেশন সাপোর্ট (সিআইএস)’ প্রতিষ্ঠার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে আগের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) বিলুপ্ত করা হয়েছে।
আইনানুগ ইন্টারসেপশনের ক্ষেত্রেও স্পষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জরুরি জীবন সুরক্ষা বা বিচারিক প্রয়োজনে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কেবল অনুমোদিত সংস্থাগুলো নিজ নিজ এখতিয়ারে ইন্টারসেপশন করতে পারবে। সিআইএস সরাসরি কোনো ইন্টারসেপশন পরিচালনা করবে না; এটি শুধু কারিগরি ও তদারকি সহায়তা দেবে।
নজরদারির অপব্যবহার ঠেকাতে আধা-বিচারিক কাউন্সিল ও সংসদীয় তদারকির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বেআইনি ইন্টারসেপশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সুযোগ থাকবে এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রতি বছর এ বিষয়ে একটি জাতীয় প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
সরকার জানিয়েছে, নতুন এই সংশোধনের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ খাতকে আন্তর্জাতিক মান এবং জাতিসংঘ ও আইটিইউসহ বৈশ্বিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে গড়ে তোলা হবে। নতুন আইনে ইমেজ ও ভয়েস প্রোটেকশন, সিম ডেটা ও ডিভাইস ডেটা সুরক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এমএ//