‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’—এই চরণে উচ্চারিত আত্মত্যাগের চেতনায় আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে, ১৯৭১ সালে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সুপরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সেই অনিবার্য পরাজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে তারা মরণকামড় দেয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর যেন জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সে লক্ষ্যেই দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহযোগিতা করে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। তারাই ঘাতক বাহিনীকে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি চিনিয়ে দেয় এবং নিরীহ মানুষগুলোকে চিহ্নিত করে।
স্বাধীনতার পর মিরপুর ও রায়েরবাজারের পরিত্যক্ত ইটখোলা থেকে শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখকসহ বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত বহু মানুষের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অনেকের হাত পেছনে বাঁধা ছিল, চোখ বাঁধা ছিল, শরীরে ছিল ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন। এসব মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়েই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই থেকে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে জাতি তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক জানিয়ে আসছে।
এই হত্যাযজ্ঞ শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ ছিল না। সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় দুই পর্যায়ে। প্রথম পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর মাধ্যমে রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষক ও চিকিৎসকরাও নিহত হন। এরপর মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়জুড়েই তারা শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক ও সংস্কৃতিসেবীদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। যুদ্ধের শেষ দিকে এসে পরিকল্পিতভাবে তালিকা করে এই বুদ্ধিজীবীদের নিধন চালানো হয়। তাঁদের মধ্যে যেমন ছিলেন প্রবীণ প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা, তেমনি ছিলেন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে এগিয়ে আসা তরুণ প্রাণ।
আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সারা দেশে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
এমএ//