গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে আবারও হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। শনিবার (২২ নভেম্বর) একাধিক স্থানে বোমাবর্ষণে অন্তত ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৮৭ জন। ছয় সপ্তাহ ধরে কার্যকর থাকা যুদ্ধবিরতির মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে আলজাজিরা জানিয়েছে, প্রথম হামলাটি গাজার উত্তরে একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। এরপর দেইর আল-বালাহ এবং নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে আরও আঘাত হানে ইসরাইলি বাহিনী।
গাজা সিটির রিমাল এলাকায় ড্রোন হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন বলে আল-শিফা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রামি মুহান্না নিশ্চিত করেছেন। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন।
দেইর আল-বালাহতে এক বাড়িতে হামলায় তিনজন নিহত হন, যাদের একজন নারী। স্থানীয় বাসিন্দা খালিল আবু হাতাব বলেন, “হঠাৎ প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। তাঁবুতে থাকা মানুষদের দৌড়াতে বলতেই দেখি পাশের বাড়ির উপরের তলা উড়ে গেছে। যুদ্ধবিরতির কোনো মানে নেই—এভাবে কেউ বাঁচতে পারে না।”
গাজা গভর্নমেন্ট মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরাইল ইতোমধ্যে ৪৯৭ বার লঙ্ঘন করেছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪২ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন—যাদের বেশির ভাগই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।
এক বিবৃতিতে অফিসটি বলেছে, ইসরাইলি বাহিনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি “গুরুতর ও ধারাবাহিকভাবে লঙ্ঘন করছে”, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং মানবিক প্রোটোকলের প্রকাশ্য অমান্য। শনিবার একদিনেই অন্তত ২৭টি লঙ্ঘন রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানায় দপ্তরটি।
অন্যদিকে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে হামালা চালানো হয়েছে “প্রতিরক্ষামূলক সাড়া” হিসেবে।
তারা জানায়, হামাসের একজন যোদ্ধা ইসরাইল-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইসরাইলি সৈন্যদের আক্রমণ করলে পাল্টা হামলায় “হামাসের পাঁচজন সিনিয়র যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে।” তবে হামাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইসরাইলি বসতকারীদের ২৬০টি হামলা নথিভুক্ত হয়েছে, ২০০৬ সালের পর যা এক মাসে সর্বোচ্চ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার মুখপাত্র থামিম আল-খিতান জানায়, ঘরবাড়ি ভাঙা, সম্পত্তি দখল, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, চলাচলে বাধা, নতুন বসতি নির্মাণ—এসবের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানচ্যুত করা হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনে “অবৈধ স্থানান্তর” এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমএ//