বর্তমানে প্রশাসনে ৯০টির বেশি অতিরিক্ত সচিব পদ শূন্য থাকলেও এ পদে পদোন্নতি দিচ্ছে না অন্তর্বর্তী সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের পদ ৪১৮টি। এসব পদের বিপরীতে অতিরিক্ত সচিব আছেন ৩২৮ জন। অনুসন্ধানে জানা গেছে অর্থ সচিবের আপত্তির কারণে আটকে আছে এসব পদে পদোন্নতি।
বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২০ তম ব্যাচের যে সকল কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জেলা প্রশাসক হননি, প্রধানমন্ত্রীর পিএস, এপিএস অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক, মহাপরিচালক বা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের পিএস, এপিএস হুওয়ার জন্য চেষ্টাও করেননি। নানাভাবে উপেক্ষিত থেকেও পেশাদারিত্বের সাথে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন তাদের পদোন্নতি ঝুলে আছে মাসের পর মাস।
জানা গেছে, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে কর্মকর্তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। তাদের চাকুরীর রেকর্ড,দুর্নীতি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত তথ্যাদি, বিগত সরকারের প্রতি অন্ধ আনুগত্যহীনতা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে শতাধিক যুগ্মসচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করার জন্য সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এতে ২০১৮ সালের নৈশ ভোটের জেলা প্রশাসকগণ এবং ২০ তম ব্যাচের প্রকাশনা 'অনুভবে বঙ্গবন্ধু' গ্রন্থের অতি উৎসাহী ২৫ জন লেখককে বাদ দিয়ে পদোন্নতির জন্য উপযুক্ত কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরী করা হয় । আর এতেই শুরু হয় যত বিপত্তি। উক্ত গ্রন্থের বেশ কয়েকজন লেখক বর্তমানে অর্থ বিভাগে কর্মরত। নিজের বিভাগের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক কারণে বাদ দিয়ে পদোন্নতির সুপারিশ করতে এস এস বি'র অন্যতম সদস্য ও অর্থ বিভাগের বর্তমান সচিব গড়িমসি শুরু করেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
তিনি মধ্য সেপ্টেম্বরে শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে এস এস বি'র সভা ত্যাগ করেন এবং এর পরেই দুই সপ্তাহের জন্য আমেরিকায় চলে যান।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, প্রশাসনে কখনোই পদ ফাঁকা রাখা যাবে না। এতে করে একদিকে প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হবে। অন্যদিকে পদোন্নতি প্রত্যাশী কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দেবে। ফলে সাধারণ মানুষ তাদের প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। সুতরাং যেসব পদ ফাঁকা অর্থাৎ অতিরিক্ত সচিবের পদগুলো দ্রুত পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা জরুরি। পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দেওয়াটাও কিন্তু অনিয়ম। সুতরাং এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
বর্তমানে গ্রেড-১ পদ আছে ৫১টি। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ১৩ জন। গ্রেড-১-এর ৩৮টি পদ শূন্য। আগামী বছরের জুন নাগাদ আরও ৭০ জন অতিরিক্ত সচিব অবসরে যাবেন। ফলে সংকট আরও বাড়বে। এজন্য দ্রুত অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি দিয়ে প্রশাসনিক স্থবিরতা কাটানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হককে ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি। একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ সরকারকে ফোন করে পদোন্নতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই।
আই/এ