ভোরের প্রথম আলোয় ঘাসের ডগায় ঝুলে থাকা শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে ঋতুর পালাবদলের কথা। বাতাসে এখন এক অচেনা শীতল ছোঁয়া, যেন প্রকৃতি ধীরে ধীরে খুলে ফেলছে শরতের উষ্ণ চাদর আর মেলে ধরছে শীতের নরম পরশ। দিনের বেলায় সূর্যের আলো এখনও তেজ ধরে রেখেছে, তবু রাত গভীর হলেই ঠান্ডার আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে গায়ে।
উত্তর সীমান্তের জেলা পঞ্চগড়েই সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তেঁতুলিয়ায় মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিনের ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রির চেয়ে প্রায় দুই ডিগ্রি কম। এক দিনের ব্যবধানে এই পতনই বলে দিচ্ছে- শীত এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে চারদিক। গ্রামের মাঠ হোক কিংবা শহরের ব্যস্ত সড়ক- সব জায়গাই যেন মোড়ানো সাদা চাদরে। কুয়াশার ভেতর দিয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন, যেন কোনো কুয়াশা ঢাকা কল্পনালোকের দৃশ্য।
আবহাওয়াবিদদের মতে, তাপমাত্রা এখন ক্রমেই নিচের দিকে নামছে। নভেম্বরের শেষ ভাগে দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ডিসেম্বরজুড়ে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য যখন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামে, তখনই বাড়ে শীতের অনুভূতি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন—যদি দিনের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি হয় আর রাতে তা নেমে আসে ১৬ ডিগ্রি বা তার নিচে, তবে বলা যায়, শীত এসে গেছে। অর্থাৎ দিন ও রাতের এই তাপমাত্রা-ব্যবধানই প্রকৃতিতে শীতের বার্তা নিয়ে আসে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত মধ্য নভেম্বর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীতের প্রভাব শুরু হয়। তাই নভেম্বরের ১৫ তারিখ নাগাদ দেশের বহু জায়গায় শীতের ছোঁয়া পাওয়া যাবে। তবে রাজধানী ঢাকায় সেটি পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
আগামী কয়েক দিনে বাতাসের গতিবেগ বাড়লে ঠান্ডার অনুভূতিও আরও তীব্র হতে পারে। পাশাপাশি সূর্যের কিরণকাল কমে এলে, অর্থাৎ দিন ছোট হতে থাকলে, প্রকৃতি ধীরে ধীরে আরও ঠান্ডা হয়ে উঠবে- যেন শীত তার পদচিহ্ন রেখে যাবে মাঠে, ঘাসে আর মানুষের হৃদয়ে।
এসি//