ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর পোকরোভস্কে তীব্র লড়াই চলছে। হাজার হাজার রুশ সেনা শহরটির আশপাশে অবস্থান নেওয়ায় ইউক্রেনীয় বাহিনী কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল ওলেক্সান্দর সিরস্কি।
রোববার (০২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরটি এখন ‘গ্রে জোন’ হিসেবে পরিচিত—যেখানে কোনো পক্ষই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি রাশিয়ার দখলে গেলে, দোনেৎস্ক অঞ্চলের সরবরাহ ও পরিবহন নিয়ন্ত্রণে বড় সুবিধা পাবে মস্কো।
শনিবার টেলিগ্রামে দেওয়া বার্তায় সিরস্কি জানান, তিনি আবারও ফ্রন্টলাইনে গিয়ে মাঠপর্যায়ের কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সরবরাহ লাইন লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, তাই সেই পথগুলো রক্ষায় বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, সিরস্কি ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতির মানচিত্র পর্যালোচনা করছেন।
ইউক্রেনের সপ্তম র্যাপিড রেসপন্স কর্পস জানিয়েছে, পোকরোভস্কে তারা কিছু কৌশলগত অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবে পরিস্থিতি এখনো “কঠিন ও পরিবর্তনশীল।” প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও বলেছেন, পোকরোভস্কের প্রতিরক্ষা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা পোকরোভস্কের উত্তর-পশ্চিমে ইউক্রেনীয় বিশেষ বাহিনীর একটি অভিযানের চেষ্টা ব্যর্থ করেছে এবং হেলিকপ্টার থেকে নামার পর ১১ জন সেনাকে হত্যা করেছে। কিয়েভ অবশ্য এই দাবি অস্বীকার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডাব্লিউ) বলছে, পোকরোভস্কের অর্ধেকেরও বেশি এলাকা এখন বিতর্কিত “গ্রে জোনে” পরিণত হয়েছে।
রাশিয়া চায়, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক—দোনবাস অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে। বিশ্লেষকদের মতে, পোকরোভস্ক দখলের মাধ্যমে মস্কো পশ্চিমা দেশগুলোকে বোঝাতে চায় যে তাদের অভিযান সফল হচ্ছে।
তবে ক্রেমলিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভ বাড়ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই রাশিয়ার দুটি প্রধান তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন এবং পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন।
জেলেনস্কি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন, বর্তমান যুদ্ধরেখাতেই সংঘর্ষ থামানোর কথা বলা হয়েছে। তবে পুতিন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আগের দাবিতেই অনড় রয়েছেন— যা কিয়েভ ও পশ্চিমা মিত্রদের কাছে কার্যত ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ হিসেবেই মনে হচ্ছে।
এমএ//