আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব ফিলিস্তিনের জন্য ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনাটি ইসরায়েলের স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে বলে অভিযোগ।

ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে হামাসকে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে নিজেদের অবস্থান জানাতে হবে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা কেবল হামাসের জবাবের অপেক্ষায় আছি। আরব দেশগুলো, মুসলিম দেশগুলো এবং ইসরায়েল ইতিমধ্যেই এতে সম্মতি দিয়েছে। যদি হামাস অস্বীকার করে, তবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।”

হামাস যদি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তাহলে ইসরায়েলের যেখানে যা করা দরকার, তিনি তা করতে দেবেন। আর তারা সহজেই এটি করতে পারবে। প্রস্তাব না মানলে হামাসকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এটা হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের ধরন, লক্ষ্য ও সময়সীমার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে। তাই বলা যায়, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনারা কবে ফেরত যাবেন, সেটার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানানো হয়নি। কীভাবে ও কখন এটা বাস্তবায়িত হবে, তা-ও স্পষ্ট নয়।

এতে আরও বলা হয়েছে, গাজা অঞ্চলটি যেকোনো ‘সন্ত্রাসী হুমকি’ থেকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল ‘নিরাপত্তা পরিধি’ বজায় রাখবে। তবে এসব শর্ত কখন পূরণ হবে, শর্তপূরণের মানদণ্ড কে নির্ধারণ করবে, সেসবের উল্লেখ নেই।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে অস্পষ্টতার বিষয়টি নেতানিয়াহুর বক্তব্যেও এসেছে।

দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, নেতানিয়াহু তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন, সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তখন নেতানিয়াহুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে তিনি একমত হয়েছেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, কোনোভাবেই নয়।’ তিনি বলেন, ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা প্রস্তাবে এ ধরনের কিছু নেই।

হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, এই পরিকল্পনা ‘সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট’ এবং এর মাধ্যমে হামাসকে নির্মূল করার ‘অসম্ভব শর্ত’ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। 

তবে আলোচনা সম্পর্কে অবহিত এক কর্মকর্তা গতকাল রয়টার্সকে বলেন, হামাসের আলোচকেরা ‘সদিচ্ছা নিয়ে এটি পর্যালোচনা করবেন এবং এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানাবেন’।

কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান বারাকাত আল-জাজিরাকে বলেছেন,  ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা ‘সমস্যাজনক’ এবং হামাসের জন্য এটি গ্রহণ করা হবে একেবারেই ‘অবিবেচকের কাজ’।

বারাকাত বলেন, এই পরিকল্পনার শুরুতেই হামাসকে তাদের সব চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার এমন এক পক্ষের কাছে ছেড়ে দিতে হবে, যাদের তারা বিশ্বাস করে না।

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প যেভাবে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে পরিকল্পনাটি ঘোষণা করেছেন, তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে প্রস্তাবটি ইসরায়েলের স্বার্থের দিকেই বেশি ঝুঁকে আছে। এবং ফিলিস্তিনের জন্য  ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’।

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অস্পষ্টভাবে রয়েছে।

কূটনৈতিক উদ্যোগের মধ্যেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।

আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় গতকাল কয়েক ঘণ্টা ধরে প্রতি মিনিটে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।

যুদ্ধের পাশাপাশি গাজায় খাবার, জ্বালানি ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম প্রবেশে কড়া বিধিনিষেধ বজায় রেখেছে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত ৪৫৩ ফিলিস্তিনি খাবার না পেয়ে অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা গেছেন বলে হালনাগাদ তথ্যে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫০টি শিশুও রয়েছে।

 

সূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #ফিলিস্তিন #ডোনাল্ড ট্রাম্প