বিনোদন

উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনা

‘এই বয়সী বাচ্চাদের হারানো মানে সব হারানো’

বিনোদন ডেস্ক

তিনি কণ্ঠশিল্পী—তবে শুধু গানের মানুষই নন, তিনি একজন বাবা, একজন নাগরিক, একজন হৃদয়বান মানুষ। বলছি, বাংলা সংগীতের অন্যতম নন্দিত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ–এর কথা। যার কণ্ঠে আমরা শুনেছি প্রেম, বিচ্ছেদ, মানবতা আর জীবনের গল্প।

বর্তমানে তিনি আছেন কানাডায়। সেখান থেকেই দেশের একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানালেন মাইলস্টোন স্কুলের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর তাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে বললেন:

“কানাডায় বসে খবর পেয়েছি। বাচ্চাগুলোর খবর শুনে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। ঘুম চলে গেছে। জীবনের কিছু সময় আসে, কিছু মুহূর্ত আসে, যা কারও জীবনে না আসাটাই ভালো। হারানোর ব্যথা সবচেয়ে বড় ব্যথা।”

তিনি শুধু একজন শিল্পী নন, একজন বাবা। সেই পরিচয়ের জায়গা থেকেই যেন আরও গভীর হয়ে ওঠে অনুভব, বলেন- “আমি তো একজন বাবা। আমার সন্তানকে দিয়ে বুঝি, যারা চিরতরে সন্তান হারিয়েছেন, তাদের কেমন লাগছে। দুনিয়ার কেউই তাদের সান্ত্বনা দিতে পারবে না। সান্ত্বনা দিয়েও কোনো লাভ হবে না। বুকের মধ্যে ব্যথা রয়ে যাবে। ক্ষতটা রয়ে যাবে চিরদিন।”

শিশুদের হঠাৎ চলে যাওয়া কুমার বিশ্বজিতের মনে নিয়ে আসে নিজের বাবাসত্ত্বাকে। বলেন, “মৃত্যুকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। যারা ছোট ছোট ফুলের মতো বাচ্চাদের হারিয়েছেন, তারা যে কী যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেটা কেবল মা-বাবারাই জানেন। সন্তানই তো তাদের জীবন।”

তিনি স্মরণ করেন নিজের বাসার পাশের মাইলস্টোন স্কুলের শিশুদের, যাদের মুখ প্রতিদিন দেখা হতো, “উত্তরায় আমার বাসা। যখন দেশে থাকি, মাইলস্টোন স্কুলের বাচ্চাদের প্রতিদিন দেখতাম। সকালে পবিত্র মুখগুলো দেখলে মন ভালো হয়ে যেত। এখন সেই মুখগুলো হারিয়ে গেছে—অনেক দিন তাদের দেখি না।”

এই বয়সেই সবচেয়ে বেশি আদর পায় সন্তানরা—সেই কথাটিও তুলে আনলেন তিনি, “যে বয়সে বাচ্চাগুলো চলে গেল, সেটা তো মধুর ছেলেবেলার সময়। বাবা-মার হাত ধরে স্কুলে যাওয়া, টিফিন দেওয়া, আদর—সবকিছুই ঘিরে থাকে এই বয়সকে। যাদের সন্তান নেই, তাদের কাছে স্মৃতি ছাড়া কিছুই রইল না। কিন্তু স্মৃতি তো আর শান্তি দেয় না, চোখের পানি ঝরতেই থাকে।”

একটু থেমে কুমার বিশ্বজিৎ যোগ করেন, “কেউ কেউ ভাবেন, ভুলে যাওয়া যায়। কিন্তু না—এই রকম ক্ষতি কখনো ভুলে যাওয়া যায় না। বুকের ভেতর হাহাকার ওঠে প্রতিদিন। কানাডায় বসে খবরটি শুনে আমারও বুকটা কেঁপে উঠেছিল।”

এমন হৃদয়বিদারক খবরে স্ত্রীর শরীর খারাপ ভেবে তিনি সেটি জানাননি। বলেন, “স্ত্রীকে বলিনি। ওর শরীর ভালো না। এমন দুঃসংবাদ নিতে পারবে না। দেশ থেকে ফোন এসেছে, ফেসবুকেও দেখেছি। শিশুগুলো তো ফুলের মতো পবিত্র। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।”

 

এসি//

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #কুমার বিশ্বজিৎ #মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ