আগামী সোমবার যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখবেন ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির নির্বাসিত ছেলে রেজা পাহলভি। তিনি ব্রিটিশ এমপি ও আইনসভার উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের সদস্যদের উদ্দেশে ‘ইরানে চলমান পরিস্থিতি, বর্তমান শাসন ব্যবস্থার সম্ভাব্য পতন ও দেশে একটি স্থিতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে তাঁর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরবেন’।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও লেবার পার্টির একাধিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সেদিন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনে একটি কমিটির কক্ষে বিকেল পাঁচটায় সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করেছেন লেবার এমপি লুক একেহার্স্ট ও কনজারভেটিভ এমপি আফরা ব্র্যান্ডরেথ।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে একহার্স্ট বলেছেন, ইরানি জনগণই নির্ধারণ করবেন, তাঁরা কেমন সরকার চান। তবে ইরানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন বিরোধী কণ্ঠ কী বলছে, সেগুলো শুনতে চায় ব্রিটিশ এমপিগণ।
রেজা পাহলভির বয়স ৬৪ বছর। ইরানের প্রয়াত শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির জ্যেষ্ঠ পুত্র তিনি। তাঁর সমর্থকদের কাছে পাহলভি ‘নির্বাসিত রাজা’ নামে পরিচিত। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত চলা গণ-অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা ক্ষমতাচ্যুত হন। তারপর ইরানে প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের ইসলামি প্রজাতন্ত্র (বর্তমান ইরান)।
লেবার মুসলিম নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান আলী মিলানি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা মানে ‘স্বাধীনতা ও ন্যায়ের জন্য সংগ্রামে নিয়োজিত প্রত্যেক ইরানির মুখে একপ্রকার চপেটাঘাত’।
তিনি আরো বলেন, রেজা পাহলভি পুরো জীবন নির্বাসনে কাটিয়েছেন। কখনোই তাঁর বাবার নিপীড়নমূলক শাসনের নিন্দা করেননি।
পাহলভির বাবার শাসনামলে বিশেষ পুলিশ বাহিনী অগণিত ইরানিকে গুম, নির্যাতন ও হত্যা করেছে।
ইরানের ভেতর থেকেই দেশটির নেতৃত্ব আসা উচিত। সেখানকার জনগণের মধ্য থেকে নেতা হওয়া উচিত। তাঁরা সত্যিকারের স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধি অর্জনের অধিকার রাখেন।
রেজা পাহলভি অনেকদিন যাবত যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত রাজতন্ত্রের এক অকৃত্রিম সমর্থক। তিনি ইরানে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আশায় কাজ করছেন। লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ছবি তুলেছেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে নিজেকে ‘আধুনিক ইরানের একমাত্র কার্যকর নেতৃত্ব’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক সংঘাতের বিষয়ে গেল ১৬ জুন পাহলভি বলেন, ইরানি শাসনব্যবস্থার কারণে এ সংকট সৃস্টি হয়েছে। বর্তমান শাসনব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপেই সমস্যার একমাত্র কার্যকর সমাধান। এতে ইরানি জনগণ এবং পৃথিবীর মানুষ উপকৃত হবে।
পাহলভির এমন বক্তব্যের জবাবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তিনি বলেছেন, ‘শাহর পুত্র একজন রক্তপিপাসু পরজীবী উপনিবেশবাদী দালাল।’
খাজা আসিফ আরও লেখেন, ‘তোমার ভাবনা অনুযায়ী ইরানিরা যদি শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে এতটাই উদ্দীপ্ত ও প্রস্তুত হয়ে থাকে, তাহলে দেশে ফিরে নেতৃত্ব দেওয়ার সাহস দেখাও।