আন্তর্জাতিক

বিদেশি কর্মীদের জন্য সৌদির যুগান্তকারী পদক্ষেপ

বিদেশি কর্মীদের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে ৫০ বছরের পুরোনো কাফালা (পৃষ্ঠপোষকতা) ব্যবস্থা বাতিল করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই ব্যবস্থার কারণে বিদেশি শ্রমিকদের জীবন নির্ভরশীল ছিল নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার ওপর। বহু শ্রমিক জীবিকা অর্জনের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার পর অমানবিক শোষণের শিকার হয়েছেন, যা দাসপ্রথার মতোই ছিল।

২০২৫ সালের জুনে ঘোষিত এই বড় সংস্কারের ফলে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বিদেশি শ্রমিক সরাসরি উপকৃত হবেন, যাদের বেশিরভাগই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সৌদিতে কাজ করতে গেছেন। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন এই সংস্কারের মাধ্যমে প্রবাসীরা এখন থেকে কাজ পরিবর্তন, দেশ ত্যাগ বা ভিসা নবায়নের ক্ষেত্রে আগের মতো কঠোর নিয়ন্ত্রণের মুখে পড়বেন না। কাফালা ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন এক চুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান মডেল চালু করেছে সৌদি সরকার, যা প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।

সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)-এর তথ্যমতে, নতুন এই ব্যবস্থায় অভিবাসী কর্মীরা এখন থেকে তাদের বর্তমান নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন, এক্সিট ভিসা ছাড়াই দেশ ত্যাগ, এবং আগে কাফালা কাঠামোর অধীনে প্রাপ্য আইনি সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগ পাবেন।

এই সংস্কার মূলত সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ উদ্যোগের অংশ, যার লক্ষ্য দেশের অর্থনীতিকে আধুনিক করা এবং বিদেশি শ্রমিকদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।

নতুন এই পদক্ষেপকে একটি ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ হিসেবে দেখছে সৌদি সরকার। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও একে সৌদির শ্রম ইতিহাসে ‘একটি নতুন অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছে। তবে সংস্থাগুলোর মতে, প্রকৃত পরিবর্তন আনতে হলে এই সংস্কারের বাস্তবায়ন ও তদারকি আরও শক্তিশালী করতে হবে।

আরবি ‘কাফালা’ শব্দটির অর্থ ‘স্পন্সরশিপ’। ১৯৫০-এর দশকে উপসাগরীয় অঞ্চলে গড়ে ওঠে এই আধুনিক আইনি কাঠামো। মূলত, সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোতে এই কাফালা ব্যবস্থা চালু ছিল।

এই ব্যবস্থার অধীনে অভিবাসী শ্রমিকদের আইনি মর্যাদা সরাসরি তাদের নিয়োগকর্তা বা ‘কাফিল’-এর সঙ্গে যুক্ত থাকত। ফলে নিয়োগকর্তা শ্রমিকের কাজ পরিবর্তন, দেশ ত্যাগ, এমনকি আইনি সহায়তা নেওয়ার বিষয়েও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতেন। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে বহু শ্রমিককে শোষণ, নির্যাতন ও অধিকারহীনতার মুখে পড়তে হয়েছে। নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া চাকরি পরিবর্তন বা আইনি সুরক্ষা পাওয়ার কোনও সুযোগই পেতেন না বিদেশি শ্রমিকরা।

 

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন