যুদ্ধবিমানের ধ্বংসস্তূপের নিচেই কবর হবে ভারতের: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
পাকিস্তান সেনাবাহিনী এক জোরালো বিবৃতিতে ভারতকে সতর্ক করে বলেছে, ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসা উসকানিমূলক ও যুদ্ধংদেহী মন্তব্যে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ভবিষ্যতে যদি নতুন করে সংঘাত শুরু হয়, তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। শনিবার (০৪ অক্টোবর) পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এ বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, পাকিস্তান আর সংযম দেখাবে না। “আমরা প্রতিপক্ষের ভূখণ্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। এবার ভারতের তথাকথিত ভৌগোলিক নিরাপত্তার মিথ ভেঙে দেওয়া হবে।”
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই বিবৃতির একদিন না যেতেই রোববার (০৫ অক্টোবর) ভোরে সামাজিক মাধ্যমে হুঁশিয়ারিতে যোগ দেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।
তিনি বলেন, “ভারত যদি আবারও যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, তবে যেসব যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচেই তাদের কবর হবে, ইনশাআল্লাহ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “৬-০ ব্যবধানে পরাজয়ের পরও যদি তারা আবার চেষ্টা করে, পাকিস্তানের স্কোর এবার আরও ভালো হবে। আমাদের রাষ্ট্র আল্লাহর নামে প্রতিষ্ঠিত, আমাদের রক্ষাকারীরাও আল্লাহর সৈনিক। ভারত এবার ধ্বংসাবশেষের নিচেই কবরস্থ হবে। আল্লাহু আকবর।”
এই তীব্র বক্তব্য আসছে এমন এক সময়, যখন চলতি বছরের এপ্রিলে কাশ্মীরের পেহেলগাম পর্যটন কেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তান জড়িয়ে পড়ে স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ এক সংঘাতে। সেই হামলার জন্য ভারত ইসলামাবাদকে দায়ী করে ‘অপারেশন সিন্দুর’ চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তান চালায় ‘অপারেশন বুনিয়ানুন মারসুস’।
মাত্র চার দিনের এই সংঘাতে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে শুরু হয় ভয়াবহ বিমান হামলা। শেষ পর্যন্ত ১০ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন।
তবে যুদ্ধ থেমে গেলেও সম্পর্ক আর আগের অবস্থায় ফিরে যায়নি। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে উত্তেজনা। এর মধ্যে ভারত সৌদি আরবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে। এতে পাকিস্তানে তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ।
অন্যদিকে ভারতও পিছিয়ে নেই— চীন ও রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে আলাদা এক ভূরাজনৈতিক বলয় গঠনের চেষ্টা করছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের তীব্র প্রতিযোগিতা।
এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং হুঁশিয়ারি দেন, স্যার ক্রিক এলাকায় পাকিস্তান আগ্রাসনের চেষ্টা করলে এমন জবাব দেয়া হবে যা “ইতিহাস ও ভূগোল—দুটোই পাল্টে দেবে।”
এরপর ভারতীয় সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী বলেন, এবার আর সংযম দেখানো হবে না। “পাকিস্তান যদি মানচিত্রে নিজের স্থান ধরে রাখতে চায়, তবে তাকে সন্ত্রাসবাদে সমর্থন বন্ধ করতেই হবে।”
এই পরপর দুটি বক্তব্যের জবাবেই এসেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি। দুই দেশের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
আন্তর্জাতিক মহল আশঙ্কা করছে, নতুন করে উত্তেজনা বাড়লে তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে, বিশেষ করে যখন দুদেশই পারমাণবিক অস্ত্রধারী।
সূত্র: আরব নিউজ
এসি//