ঘুমোতে যাওয়ার আগে মোবাইল স্ক্রিনকে বন্ধু বানিয়েছেন?
আজকের পৃথিবী যেন একেবারে হাতের মুঠোয় ঢুকে গেছে। একমাত্র স্মার্টফোনেই যেনো আমরা খবর, বিনোদন, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি আমাদের জীবনটাই খুঁজে পাই। কিন্তু কখনও ভেবেছেন কি, এই ক্ষুদ্র যন্ত্র কতটা অচেতনভাবে আমাদের শরীর ও মনের উপর প্রভাব ফেলছে? বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে যখন আমরা নিজেরাই ‘চোখের সামনে আলো’, ‘মনোরঞ্জন’ আর ‘নীরব একাকীত্ব’ ভেবে অনাবশ্যক সময় কেটে দেই।
স্মার্টফোনের এই ‘বন্ধুত্ব’ আমাদের জীবনের ঘুম, চোখের স্বাস্থ্য, মনোভাব, স্মৃতি এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের জন্য একেবারে ফাঁদে পরিণত হতে পারে। চলুন, এক নজরে দেখি রাতের ফোন ব্যবহার কতখানি ক্ষতিকর হতে পারে।
ঘুম: হারিয়ে যাওয়া শান্তির সময়
আমাদের মস্তিষ্ক প্রতিরাতে মেলাটোনিন নামক হরমোন নির্গত করে, যা ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে মোবাইল স্ক্রিনের নীল আলো এই হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে। এর ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়, অথবা ঘুমের মান খারাপ হয়। ফল? সকালবেলায় ক্লান্তি, মন খারাপ এবং পুরো দিনের কর্মক্ষমতার পতন। তাই রাতের ফোন ব্যবহার যতটা সম্ভব সীমিত করা একান্ত প্রয়োজন।
চোখ: নীল আলো ও ক্ষয়ক্ষতির ছায়া
মোবাইলের স্ক্রিন থেকে নির্গত ক্ষুদ্রতর আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য চোখের ওপর চাপ তৈরি করে। বিশেষত রাতের অন্ধকারে দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকালে চোখের নানান সমস্যা বাড়তে পারে, যেমন চোখে ব্যথা, ঝাপসা দেখা, চোখের রেটিনায় ক্ষয়। চোখকে সুস্থ রাখতে রাতের এই অভ্যাস ত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
মন: অচেতন বিষাদ
ফেসবুক, ওয়েব সিরিজ বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম রাতভর ঘাঁটলে শুধুমাত্র চোখ নয়, মনের ওপরও প্রভাব পড়ে। বিশেষত নীল আলো মানসিক চাপ বাড়াতে পারে, অবসাদ বা মন খারাপের প্রবণতা ত্বরান্বিত করতে পারে। ফলে সকালবেলা ওঠার পরও দুশ্চিন্তা, হতাশা এবং কাজের আগ্রহ হ্রাস পেতে পারে।
শরীর: ক্ষুদ্র কিন্তু ক্রমবর্ধমান বিপদ
প্রতি মুহূর্তে স্মার্টফোন থেকে নির্গত ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘ সময় ঘরে বা শয্যায় ফোন ব্যবহারে এই ক্ষতি গোপনভাবে বাড়তে পারে, যা শেষ পর্যন্ত ক্যানসারের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই রাতে ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য অপরিহার্য।
স্মৃতিশক্তি: ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া
গবেষণা প্রমাণ করে, দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষত রাতের অন্ধকারে ফোনের সঙ্গে অতিরিক্ত সময় কাটালে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে, মনোযোগের ধার কমে যেতে পারে। মস্তিষ্কের ক্ষমতা ধরে রাখতে ফোন ব্যবহার সীমিত রাখা সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়।
রাতের অন্ধকারে এই ছোট যন্ত্র আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে অচেনা বিপদে ফেলতে পারে। কিন্তু সচেতনতা ও ছোট ছোট পরিবর্তন এই ক্ষতি এড়াতে সাহায্য করতে পারে। তাই রাতের ফোনের অকারণ ব্যবহার কমান, চোখ, মন ও শরীরের সুস্থতা ফিরিয়ে আনুন। স্মার্টফোন ব্যবহার করুন, কিন্তু নিয়ন্ত্রণে থাকুক।
এসি//