মাছে অ্যালার্জি, সতর্ক না হলে হতে পারে জীবনঘাতী
মাছ আমাদের খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিনের সমৃদ্ধ উৎস। কিন্তু অনেকের জন্য মাছ খাওয়ার পর হঠাৎ চুলকানি, ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। এই প্রতিক্রিয়াটিই হলো মাছজনিত অ্যালার্জি বা Fish Allergy।
মাছের প্রোটিন বিশেষ করে প্যারভালবুমিন (Parvalbumin) শরীরের ইমিউন সিস্টেমের জন্য হুমকি হিসেবে ধরা হয়। ফলে শরীর ইমিউনোগ্লোবুলিন-ই (IgE) তৈরি করে যা হিস্টামিন নিঃসরণ করে এবং এলার্জির বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করে। সাধারণত টুনা, সালমন, কড, হিলশা, ক্যাটফিশ, সারডিন ইত্যাদি মাছ বেশি অ্যালার্জি তৈরি করে।
উপসর্গ
মাছ খাওয়ার কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এলার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে:
• ঠোঁট, জিহ্বা বা গলায় ফোলা ও চুলকানি
• ত্বকে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি
• পেটব্যথা, বমি, ডায়রিয়া
• নাক বন্ধ হওয়া, হাঁচি, কাশি
• গুরুতর ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বা অ্যানাফাইল্যাক্সিস, যা জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি করে
করণীয়
মাছ এড়িয়ে চলুন:
এলার্জি থাকলে মাছ সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া নিরাপদ।
খাবারের লেবেল পরীক্ষা করুন:
প্রসেসড ফুডে মাছজাত উপাদান থাকতে পারে, যেমন সস, ফিশ অয়েল, প্রোটিন পাউডার।
প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন:
হালকা উপসর্গে অ্যান্টিহিস্টামিন (যেমন সেটিরিজিন, লোরাটাডিন) কাজে আসে। গুরুতর শ্বাসকষ্ট হলে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে যেতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তার এপিনেফ্রিন ইনজেকশন ব্যবহার করবেন।
ডাক্তারি পরীক্ষা করানো:
Skin Prick Test বা IgE Blood Test দিয়ে নিশ্চিত করা যায় কোন মাছ বা প্রোটিনে সমস্যা হচ্ছে।
বিকল্প প্রোটিন গ্রহণ করুন:
মাছ না খেলে মুরগি, ডিম, ডাল, শাকসবজি বা দুধজাত খাবার থেকে প্রোটিন নেওয়া যেতে পারে।
মাছ এবং চিংড়ি/ঝিনুকের অ্যালার্জি আলাদা। শেলফিশ অ্যালার্জি ভিন্ন প্রোটিনের কারণে হয়। কেউ কেউ দুই ধরনের অ্যালার্জিতেও সংবেদনশীল হতে পারেন।
সতর্কতা
• শিশুদের মধ্যে মাছের অ্যালার্জি বেশি দেখা যায়।
• পরিবারের অন্য সদস্যদেরও ঝুঁকি থাকতে পারে।
• রান্নাঘরে মাছ রান্নার সময়ও সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।
মাছ অ্যালার্জি শুধুমাত্র অস্বস্তিকর নয়, গুরুতর ক্ষেত্রে জীবনঘাতী হতে পারে। তাই মাছ এড়িয়ে চলা, প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া এবং বিকল্প প্রোটিন গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এসকে//