লাইফস্টাইল

প্রতারণার পর নিজেকে ফিরে পাওয়ার কার্যকারী কিছু কৌশল

একটি দীর্ঘকালীন কাছাকাছির সম্পর্ক যেখানে একে অপরের উপর গভীর বিশ্বাস এবং নির্ভরতা তৈরি হয় সেই সম্পর্কেই যখন প্রতারণার ঘটনা ঘটে তখন তার প্রভাব হয় গভীর এবং ব্যক্তিগত। এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলানো এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে কিছু মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং পরামর্শ।

প্রতারণা হলো একজন বা একাধিক ব্যক্তির বিশ্বাস ভঙ্গ করা। এটি কোনও সম্পর্কের বিশ্বাস এবং নিরাপত্তা হরণ করে। সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং স্বচ্ছতার একটি স্থির ভিত্তি থাকা প্রয়োজন এবং যখন কেউ সেই ভিত্তি ভেঙে দেয় তখন এটি মানসিকভাবে অত্যন্ত আঘাতজনক হতে পারে।

কারণ :

• আবেগিক দূরত্ব: কখনও কখনও সম্পর্কের মধ্যে আবেগিক দূরত্ব তৈরি হলে এক পক্ষ অন্যের কাছ থেকে মনোযোগ এবং সমর্থন খুঁজে পায়।

• বিশ্বাসের অভাব: সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব থাকা এক পক্ষের পক্ষ থেকে প্রলোভন সৃষ্টি করতে পারে।

• কমিউনিকেশন গ্যাপ: যোগাযোগের অভাবের কারণে অনেকসময় এক পক্ষের মনোভাব ও চাহিদা পূর্ণ হতে পারে না যা প্রতারণার দিকে ঠেলে দেয়।

• অনুভূতি বা তৃপ্তির খোঁজ: কখনও কখনও এক পক্ষ তার জীবনে অভাব বা তৃপ্তির অভাব বোধ করতে পারে যার ফলে সে প্রতারণার দিকে ঝুঁকে পড়ে।

প্রভাব :

প্রতারণা কেবল শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবে ও ব্যক্তিগত জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে সম্পর্কের মধ্যে যে বিশ্বাস ছিল, তা ভেঙে যায় এবং অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। প্রতারণার প্রভাবে কিছু সাধারণ মানসিক অবস্থার মধ্যে থাকে:

• বিশ্বাসের ভাঙ্গন: সম্পর্কের মূল ভিত্তি ভেঙে যায়।

• আত্মসম্মান হানি: ব্যক্তিগত অমর্যাদা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব।

• বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ: দীর্ঘকালীন সম্পর্কের পর এ ধরণের ঘটনায় বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি হতে পারে।

• দ্বিধা ও সন্দেহ: আগের বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ায়, ভবিষ্যৎ সম্পর্কগুলোর প্রতি সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে।

নিজেকে সামলানো :

প্রতারণার শিকার হওয়ার পর নিজেকে সামলানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল সাজিয়ে দিয়েছেন:

নিজের অনুভূতি গ্রহণ করুন:

আপনি যখন প্রতারণার শিকার হন, তখন নিজের অনুভূতি এবং আবেগ প্রকাশ করতে এবং গ্রহণ করতে হবে। রাগ, দুঃখ, হতাশা এবং কষ্টের অনুভূতিগুলো আসা খুবই স্বাভাবিক। কোনও কিছুর জন্য নিজেকে দোষী মনে করবেন না এবং অনুভূতি চাপা দেবেন না।

বিশ্বাস পুনর্নির্মাণ:

বিশ্বাস ভাঙা খুবই কঠিন। তবে, যদি সম্পর্কটি পুনর্গঠন করতে চান, তাহলে খোলামেলা এবং সত্যিকারের যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। পারস্পরিক সম্মান এবং বিশ্বাসের ভিত্তি পুনরুদ্ধার করতে হতে পারে।

মনের শান্তি তৈরি করুন:

মনে রাখবেন, এই অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আপনি নিজেকে শক্তিশালী করতে পারেন। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শখের কাজের মাধ্যমে মনের শান্তি বজায় রাখতে পারেন। নিজের মনঃসংযোগ এবং শান্তি অর্জন করার জন্য সময় বের করুন।

সমাধান খোঁজা:

যদি আপনি সম্পর্কটি আর টিকিয়ে রাখতে চান তবে সবার আগে ভুল বুঝাবুঝি এবং প্রতারণার কারণ খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ।  এরপরে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন এটি পুনর্গঠন করা সম্ভব কি না।

স্বাস্থ্যকর সামাজিক পরিবেশ বজায় রাখুন:

প্রতারণার শিকার হওয়ার পরে আপনি নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করতে পারেন কিন্তু প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো, বন্ধুদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা এবং সামাজিক পরিবেশে থাকাটা আপনাকে সহায়তা করবে।

কিছু সময় আলাদা থাকুন:

একটি ব্রেক নেওয়া অনেক সময় দরকারি হতে পারে। কিছু দিন একে অপর থেকে আলাদা থাকলে সম্পর্কের মধ্যে থাকা আবেগের ভার এবং চাপ কিছুটা কমে আসে।

বিকল্প পদক্ষেপ :

• থেরাপি গ্রহণ করুন: 

সম্পর্কের মধ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে প্রতারণা শিকার হওয়ার পর থেরাপি বা কাউন্সেলিং গ্রহণ করা উপকারী হতে পারে।

• নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করুন: 

নিজেকে নতুন করে গড়তে এবং নিজের পছন্দে সময় কাটাতে এটি একটি সুযোগ হতে পারে।  একটি শখ শুরু করা, নতুন কিছু শিখতে শুরু করা অথবা ভ্রমণ করা আপনাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিতে পারে।

সূত্র :

১. "মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অবিশ্বাসের প্রভাব: একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনা" (সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক জার্নাল, ২০২০) - মানসিক স্বাস্থ্য এবং সম্পর্কের ভাঙন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

২. "বিশ্বাসঘাতকতার পর নিরাময়: একটি ঘটনা থেকে পুনরুদ্ধারের ১০টি উপায়" (সাইকোলজি টুডে, ২০১৯) - প্রতারণার পর নিজেকে কিভাবে সুস্থ করতে হবে তা নিয়ে তথ্য।

৩. "বিশ্বাসঘাতকতার সাথে কীভাবে মোকাবিলা করবেন: মানসিক পুনরুদ্ধার এবং নিরাময়" (হেলথলাইন, ২০২১)- প্রতারণা শিকার হওয়ার পর কীভাবে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়।

৪. "সম্পর্ক থেরাপি: অবিশ্বাসের পরে বিশ্বাস মেরামত" (আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, ২০২১)- সম্পর্ক পুনর্গঠন ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করার পদক্ষেপ।

এসকে// 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন