ছোট্ট ঘুম, বড় ঝামেলা!
দিনের মধ্যে একটু বিশ্রাম নেয়া—যাকে বলা হয় দুপুরের ছোট ঘুম—অনেকের কাছে ক্লান্তি কাটানোর অন্যতম সহজ উপায়। কিন্তু কল্পনার বিপরীত, কারো কারো জন্য এই ছোট্ট ঘুম হয়ে ওঠে এক অদ্ভুত কষ্টের কারণ। ঘুম ভাঙার পর মাথা ভারি, বমিভাব, মাথা ঘুরে এবং মন বিষণ্ন হয়ে পড়ে। অনেকেই এই সমস্যার মুখোমুখি হলেও কারণ বুঝে উঠতে পারেন না।
শরীরের ঘুমের একটা নিয়মিত চক্র থাকে, যা প্রায় ৯০ মিনিটের সমান। এই সময়ে আমাদের ঘুমের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে—হালকা ঘুম থেকে গভীর ঘুম ও স্বপ্ন দেখা পর্যন্ত। যখন দিনে কেউ এই পূর্ণ ঘুমের চক্র শেষ না করে হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে যান, তখন শরীরের মধ্যে একটা অবস্থা তৈরি হয়, যা ‘ঘুমের জ্বর’ বা Sleep Inertia নামে পরিচিত। এতে বমিভাব, মাথা ঘোরা, মাথা ভারি অনুভূত হয় এবং দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। দিনের ঘুমে এই সমস্যা রাতে ঘুমের তুলনায় বেশি দেখা যায় কারণ তখন শরীর সেই সময়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত থাকে না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো পাকস্থলীর সমস্যা, বিশেষ করে এসিড রিফ্লাক্স বা পাকস্থলীর অ্যাসিডের উর্ধ্বগতি। দুপুরের খাবারের পর সরাসরি শুয়ে পড়লে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালিতে উঠে আসে, যা বমিভাব ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। যাদের গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বা নিয়মিত এসিডের সমস্যা থাকে, তাদের জন্য দুপুরের ঘুমের পর এই অসুস্থতা বেড়ে যায়।
দুপুরের ছোট ঘুমের পরে অস্বস্তি এড়ানোর উপায়:
প্রথমে নিজের ঘুমের সময় ঠিক করুন। ২০ মিনিটের বেশি ঘুমাতে যাবেন না, কারণ দীর্ঘ ঘুম হলে শরীর গভীর ঘুমে ঢুকে পরে উঠলে অসুস্থতা বাড়ে। যদি শরীর আরও বেশি বিশ্রাম চাই, তাহলে পুরো ৯০ মিনিটের একটা চক্র ঘুমান। এতে ঘুম ভাঙ্গার পর মন ভাল থাকবে।
অপর দিকে, খাবারের পর কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন, তারপর শুয়ে পড়ুন। ঘুমের আগে ঝাল, তেলবহুল ও অ্যাসিডিক খাবার এড়িয়ে চলুন। শোয়ার সময় মাথা আর বুক একটু উঁচু করে বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দিন, এতে অ্যাসিড সহজে নীচে চলে যাবে আর বমিভাব কম হবে।
আর হ্যাঁ, রাতে ভাল ঘুমের জন্য আগে থেকে হালকা কিছু পড়ুন বা মেডিটেশন করুন, ফোন বা টিভির নীল আলো থেকে দূরে থাকুন। ফলে দিনের ক্লান্তি কমে এবং দুপুরের ছোট ঘুম শরীরে জন্য আরও উপকারী হয়।
এই সহজ নিয়মগুলো মেনে চললে দুপুরের ছোট ঘুমের পরে যে অস্বস্তি হয়, তা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। ছোট খাট অভ্যাস বদলেই এই বিশ্রামের সময়টাকে শান্তি আর সতেজতার মুহূর্তে পরিণত করা যায়।
তাই এবার থেকে দুপুরের ঘুমকে ভয় পেতে হবে না। একটু সচেতন হলে, দিনের এই ছোট বিশ্রাম হতে পারে শরীর আর মনের সেরা উপহার।
এসি//