জাতীয়

আরেকটু হলেই গুম হতাম

৫ আগস্টের দুপুরে একটি ফোনেই বদলে যায় ইতিহাস: প্রেস সচিব

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেছেন- এই খবর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুর পৌনে ১টায় প্রথম জানতে পারেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত বছরের ৫ আগস্ট, ঢাকামুখী জনতার ঢল আর পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যাচ্ছিল বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই শুনছিলাম সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকায় জড়ো হচ্ছে। রাস্তাঘাটে পুলিশের উপস্থিতিও ছিল তুলনামূলকভাবে কম। দুপুর ১২টার দিকে চারপাশে লক্ষ করলাম, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়ে পড়েছে।’

এই দৃশ্য দেখে তার কৌতূহল বেড়ে যায়—গণভবনের ভেতরে কী ঘটছে?

‘এই চিন্তা থেকেই ১২টা ৪৫ মিনিটে আমি পরিচিত একজনকে ফোন করি। তিনি সরাসরিই জানালেন—‘উনি (শেখ হাসিনা) তো গণভবন ছেড়ে গেছেন। এমনকি ভারতেও চলে যেতে পারেন!’ খবরটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার বসদের বিষয়টি জানিয়ে দিই।’

তিনি আরও বলেন, সেসময় আমার অফিসে এএফপির কয়েকজন সাংবাদিক ছিলেন। কিন্তু বসরা বললেন, যেহেতু এটি একটি ‘সিঙ্গেল সোর্স’ এবং তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, তাই খবরটি প্রকাশ করা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ, শেখ হাসিনা যদি সত্যিই চলে গিয়ে আবার ফিরে আসতেন, তাহলে আমার সংবাদকে ভুয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো। কিংবা যদি তিনি ক্ষমতায় টিকে যেতেন, তাহলে বলা হতো, আমি রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করেছি। এতে আমার গুম হয়ে যাওয়া বা মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকিও ছিল!

‘সবদিক বিবেচনায় এএফপি জানায়, আরেকজন সূত্র থেকে নিশ্চিত হলে তবেই সংবাদ প্রকাশ করা যাবে। এরপর আমি আরেকজনকে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হলাম। দ্বিতীয় সূত্র আমাকে আরও বিস্তারিত জানালেন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরা থেকে প্রায় ৫ লাখ মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছিল। শনির আখড়া ও যাত্রাবাড়ী দিক থেকে আরও সাড়ে ৩ লাখ মানুষ আসছিল। এসএসএফ বলেছে, এত বিশাল জনস্রোত ঢাকায় ঢুকলে তা ঠেকানো সম্ভব নয়। আর এত মানুষকে গুলি করে হত্যা করে টিকে থাকাও অসম্ভব। এ অবস্থান থেকেই শেখ হাসিনাকে সরে যেতে বলা হয়।

তবে শেখ হাসিনা বিটিভিকে ডেকে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এসএসএফ তা করতে দেয়নি। কারণ, তখন সময়ই ছিল না

তিনি বলেন, তারা (প্রধানমন্ত্রীর দল) প্রথমে রওনা দেয় বাংলাদেশ-চায়না সেন্টারের দিকে। তাদের পরিকল্পনা ছিল, সেখান থেকে জাহাঙ্গীরগেইট হয়ে ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে কুর্মিটোলা এয়ারবেস হয়ে বিমানবন্দরে ঢোকা। কিন্তু বাংলাদেশ-চায়না সেন্টারের কাছে পৌঁছানোর আগেই খবর পান যে, উত্তরা থেকে আগত বিশাল জনস্রোত ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। তখন তারা বলেন, এটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে যান এবং সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে স্থান ত্যাগ করেন।

শফিকুল আলম আরও বলেন, পুরো ঘটনার বর্ণনা লিখে দিলাম। তখনই আমাদের রিপোর্ট ব্রেকিং হলো। বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকা ও অনেক টিভি চ্যানেল এএফপির ক্লায়েন্ট। তারা ব্রেকিং হিসেবে এএফপি সূত্রে শেখ হাসিনার চলে যাওয়ার খবর প্রকাশ করে। এরপর আমি অসংখ্য ফোন পেতে শুরু করি। এতে আমি আরও টেনশনে পড়ে যাই, কারণ আমার সংবাদ তো আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে গেছে। তখন টেনশনে আমি সুরা কেরাত পড়া শুরু করি। কারণ, যদি এমন হতো যে তিনি ফিরে এসেছেন, তাহলে তো আমার জীবনই শেষ!

‘এইভাবে সময় পার হচ্ছিল। আমরা আরও কিছু প্রতিবেদন তৈরি করলাম। এরপর দুপুর ২টার দিকে বিটিভির স্ক্রলে দেখি লেখা এসেছে, সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। তখনই আমি নিশ্চিত হলাম, শেখ হাসিনা চলে গেছেন। তখন আমাদের ভয় পুরোপুরি কেটে যায়’, বলেন শফিকুল আলম।

 

এসি//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন