অভিবাসীদের সহায়তা করা অপরাধ
নেদারল্যান্ডসে কঠোর আশ্রয় আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
নেদারল্যান্ডসের সদ্য পাস হওয়া কঠোর আশ্রয় আইনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) দেশটির রোতারডামে এই প্রতিবাদ হয়। সম্প্রতি দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস’-এ নতুন এই আইনটি পাস করানো হয়। এই আইন অনুযায়ী সেদেশে অবৈধ অভিবাসীদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করার বিধান রাখা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা ইউনিয়ন পতাকা ও বিভিন্ন বার্তা লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘কেউ অবৈধ নয়’, ‘বেঁচে থাকা কোনও অপরাধ নয়’ এবং ‘মানবতা কোথায়?’। এছাড়া তারা ‘সীমান্ত নয়, জাতি নয়, নির্বাসন বন্ধ করো’ স্লোগান দেন।
একজন বিক্ষোভকারী আইনটিকে ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষেরই, খাদ্য, আশ্রয় ও নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সহায়তা করাও একটি মানবিক কর্তব্য। এটা করলে শাস্তির পেতে হবে এমন আইন সভ্যতা বিরোধি।
বিক্ষোভ আয়োজকদের একজন বলেন, নেদারল্যান্ডস তুলনামূলকভাবে খুব বেশি অভিবাসী গ্রহণ করে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত সম্মিলিতভাবে এই দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া। তিনি আরও বলেন, অভিবাসীদের গ্রহণ করার ব্যাপারে ইইউ সদস্য দেশগুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এই দায়িত্ব একটি দেশের পক্ষে নেয়া উচিত নয়।
অন্য একজন বিক্ষোভকারী জানান, নেদারল্যান্ডসে অবৈধ অভিবাসীদের জায়গা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা আছে। তার মতে, বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ কাগজপত্র ছাড়াই দেশটিতে অবস্থান করছেন। এতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, তিনি শুধুমাত্র ভাগ্যের জোরে নেদারল্যান্ডসে জন্ম নিয়ে ডাচ পাসপোর্ট পেয়েছেন। কিন্তু যারা সে সুযোগ পাননি, তাঁদের জীবনে প্রতিনিয়ত ভয় এবং অনিশ্চয়তা কাজ করে। আগে তাদের জন্য সামান্য সুরক্ষা ছিল। এই নতুন আইনের ফলে তাঁদের সেটাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এটি মানবতার বিপরীত।
নতুন আশ্রয় আইন অনুযায়ী, অভিবাসীদের সহায়তা করাও ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
নতুন ব্যবস্থায় দ্বিস্তর বিশিষ্ট একটি কাঠামো চালু হয়েছে। এতে রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার শরণার্থীদের কিছু অধিকার দেয়া হয়েছে। তবে সংঘাত বা পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে পালিয়ে আসা অভিবাসীদের অধিকার সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
এছাড়া স্থায়ী আবাসনের সুযোগ বাতিল করে অস্থায়ী আবাসনের মেয়াদ তিন বছরে সীমিত করা হয়েছে। অভিবাসীদের আটক ও নির্বাসনেও পাঠাতে সরকারের ক্ষমতাও ব্যাপক বাড়ানো হয়েছে।
এই আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। এমন আশঙ্কা জানিয়েছে, আইন বিশেষজ্ঞ, শিশু সুরক্ষা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো।