মহানবী (সা.)-কে ব্যঙ্গের অভিযোগে তুরস্কে ৪ কার্টুনিস্ট গ্রেপ্তার
ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং ইহুদি ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুসা (আ.)-কে ব্যঙ্গ করে কার্টুন আঁকার অভিযোগে তুরস্কে চার কার্টুনিস্টকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (৩০ জুন) দেশটির রাজধানী ইস্তাম্বুল থেকে তাদের আটক করা হয়।
মঙ্গলবার (০১ জুলাই) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি তুরস্কের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যঙ্গ সাময়িকী ‘লেমান’-এ একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়। সেই ব্যঙ্গচিত্রে এক মুসলিম ও এক ইহুদি ব্যক্তিকে একে অপরের সঙ্গে করমর্দনরত অবস্থায় দেখানো হয়।
কার্টুনে তাদের পায়ের নিচ থেকে একের পর এক বোমা পড়তে দেখা যায়, উভয়ের পিঠে আঁকা হয় একজোড়া পাখা এবং মাথার ওপর দেয়া হয় দেবদূতের মতো আলোকচ্ছটা। মুসলিম ব্যক্তির নাম হিসেবে উল্লেখ করা হয় ‘মোহাম্মেদ’।
লেমানের সর্বশেষ সংখ্যাটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্টুনটি ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে যে হযরত মুহম্মদ (স.) এবং হযরত মুসা (আ.)-কে ব্যঙ্গ করে কার্টুনটি আঁকা হয়েছে। তবে লেমান কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গতকাল সোমবার তুরস্কের প্রধান পর্যটন সড়কে শত শত মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তারা ‘আল্লাহ মহান’ স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামি শরিয়া আইন অনুসারে এই লেমানের কর্তৃপক্ষ, সম্পাদক ও কার্টুনিস্টদের বিচারের দাবি জানান।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া গতকাল সংবাদিকদের বলেছেন, এই কার্টুনটি বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার চরম অপব্যবহার এবং যারা এটি অঙ্কণ ও প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত— তাদের সবাইকে আইনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি ফাহরেত্তিন আলতুন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এই কার্টুন আমাদের বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের ওপর ঘৃণ্য আঘাত।”
তুরস্কের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ ইস্যুতে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে লেমান সাময়িকীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কার্টুনটিতে ইসলাম ধর্মের প্রবক্তা হযরত মুহম্মদ (স.)-কে ব্যঙ্গ করা হয়নি। বরং ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মুসলিমদের ওপর চলমান অত্যাচার নিয়ে মুসলিম বিশ্বের নীরবতাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে।
সোমবার এক বিবৃতিতে লেমানের কর্তৃপক্ষ বলেছে, “এই কার্টুনটিতে মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.)-কে কেনোভাবেই ব্যঙ্গ করা হয়নি; বরং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে যেসব মুসলিম সহযোগিতা করছেন— কার্টুনের মোহাম্মেদ তারই প্রতীক। কারণ এইসব ক্ষমতাবান মুসলিমদের কারণে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মুসলিম নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।”
“আমরা মহানবী (সা.)-এর ক্যারিকেচার আঁকিনি। তাই যে অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে— তা সঠিক নয়। তারপরও আমাদের প্রকাশিত কার্টুনের কারণে যারা আঘাত পেয়েছেন— তাদের কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি।”