জাতীয়

‘ভবিষ্যতে আরও বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে’

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ঢাকাসহ সারাদেশে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ৫.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে মনে করছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অবস্থান ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে। দেশের পূর্বাংশ বার্মা প্লেট এবং পশ্চিমাংশ ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে হওয়ায় এই ঝাঁকুনি এত শক্তিশালী হয়েছিল। তিনি বলেন, এই প্লেট সংযোগ দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল, যা শুক্রবারের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ‘খুলে’ গেছে। এর মাধ্যমে মনে করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ সাল থেকে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, যে অঞ্চলে ৮ মাত্রার শক্তি জমা আছে, এবং শুক্রবারের কম্পন সেই শক্তির একটি অংশ মুক্ত করেছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবির জানিয়েছেন, ঢাকাসহ আশেপাশের অঞ্চলে এটি বিগত কয়েক দশকে অনুভূত সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সামান্য বেশি মাত্রার ৪ থেকে ৫ মাত্রার কম্পন অনুভূত হলেও, এগুলোর উৎপত্তি দেশের বাইরে। তিনি বলেন, ইতিহাস প্রমাণ করে, এই অঞ্চল ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, তাই যে কোনো সময় আরও বড় কম্পন ঘটতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসাইন ভূইয়া মনে করেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং তিনটি টেকটোনিক প্লেট—ইন্ডিয়ান, বার্মা ও ইউরেশিয়ান—এর সংযোগের কারণে ভূমিকম্প হওয়া স্বাভাবিক। তিনি বলেন, দেশের ভূগঠন প্রধানত নরম শিলা দিয়ে তৈরি হওয়ায়, নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি ও উচ্চ অ্যাম্পলিচিউডের কম্পন হলে ক্ষতি বেশি হয়। মাটির কম্পন ও ভবনের কম্পন একত্রিত হলে তা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

তিনি আরও জানান, ছোট মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিনিয়ত ঘটে, যা স্বাভাবিক। পৃথিবীতে দৈনিক গড়ে প্রায় ৫০টি ছোট কম্পন হয়। এক থেকে তিন মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণত অনুভূত হয় না, তবে চার বা তার ওপরে হলে মানুষ তা টের পায় এবং ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

শুক্রবারের ভূমিকম্পটি নরসিংদীর মাধবদী থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে উৎপত্তি করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এটি মাঝারি ধরনের এবং এর গভীরতা প্রায় ১০ কিলোমিটার। মাটির উপর কম্পনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে এটি স্মরণকালের মধ্যে সর্বাধিক তীব্রতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া, এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #ভূমিকম্প #বাংলাদেশ