দীর্ঘ ৩৩ বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। দিনভর উত্তেজনা আর বৃষ্টি-ঝড়ের মাঝেই বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। ভোট শেষ হতেই এখন পুরো ক্যাম্পাস তাকিয়ে আছে ফলাফলের অপেক্ষায়।
এবারের নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। এর মধ্যে ১০টি ছাত্রী হল এবং ১১টি ছাত্র হল। মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৭ জন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রায় ৫৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১০২ জন।
দিনভর ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে চললেও শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কারচুপি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলটির জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী এ ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে নয়টি নির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগও তুলে ধরেন তারা।
এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সমর্থিত প্যানেলও নির্বাচন কমিশন ও ভোট কার্যক্রমের ওপর অনাস্থা জানিয়েছে। ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, ভোটের শেষদিকে বিএনপিপন্থি শিক্ষকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকেও নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা আসে। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বাড়ে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগও নির্বাচনে ভোগান্তি বাড়ায়। দিনভর বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে একাধিক কেন্দ্রে আলো না থাকায় শিক্ষার্থীদের অন্ধকারে ভোট দিতে হয়। এছাড়া অমোচনীয় কালি ব্যবহার না করা, এক আবাসিক হলে ব্যালটে প্রার্থীদের নাম না থাকা এবং জাল ভোট পড়ার অভিযোগও উঠে আসে।
এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থীর ২৫ শতাংশই ছাত্রী, তবে ভিপি পদে কোনো নারী প্রার্থী নেই। জিএস পদে ১৫ জনের মধ্যে মাত্র দুজন নারী। মেয়েদের হলগুলোর পাঁচটিতে ১৫টি পদে কোনো প্রার্থীই ছিল না।
এবারের জাকসু নির্বাচনে অংশ নেয় আটটি প্যানেল। ছাত্রদল থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন শেখ সাদী হাসান ও জিএস পদে তানজিলা হোসেন বৈশাখী। বাগাছাসের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’র নেতৃত্ব দেন আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম। ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেল থেকে ভিপি পদে লড়েন আব্দুর রশিদ জিতু এবং জিএস পদে মো. শাকিল আলী।
ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ছিলেন আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। ছাত্র ইউনিয়নের ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল থেকে জিএস পদে শরণ এহসান, এজিএস (পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত এবং এজিএস (নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে তাদের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা আদালত বাতিল করে।
এছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রফ্রন্টের ‘সংশপ্তক পর্যদ’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ছিলেন জাহিদুল ইসলাম ঈমন এবং এজিএস (নারী) পদে লড়েন সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস।
এসি//