গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস উপেক্ষা করায় 'জুলাই ঘোষণাপত্র' প্রত্যাখ্যান করেছে গণঅধিকার পরিষদ। ঘোষণাপত্রে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে দলটি।
বুধবার (০৬ আগস্ট) রাজধানীর পুরানা পল্টনের আলরাজী কমপ্লেক্সে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন লিখিত বক্তব্যে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সূচনা। অথচ ঘোষণাপত্রে সেই বাস্তবতা উপেক্ষা করে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে রাশেদ খাঁনের বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের পর হাইকোর্টের রায়ে তা ফেরত না আসায় আবার আন্দোলন শুরু হয়। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের কথা বলা হলেও, প্রকৃত প্রেক্ষাপট ছিল কোটা সংস্কার। কিন্তু ঘোষণাপত্রে সেই আন্দোলনের ইতিহাস বাদ দিয়ে বিকৃত তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র অধিকার পরিষদ ও গণঅধিকার পরিষদের নেতৃত্বে যে ধারাবাহিক আন্দোলন হয়েছে, সেটির কোনো স্বীকৃতি নেই ঘোষণাপত্রে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের ভূমিকা মুছে ফেলা হয়েছে। এভাবে ইতিহাস বিকৃতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভুল শেখাবে। যেমনটি এক সময় ১৯৭১-এর ঘটনাবলির ক্ষেত্রেও হয়েছিল।’
জুলাই ঘোষণাপত্রের ১৭তম দফা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। রাশেদ বলেন, আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের হিসাবে এই সংখ্যা ১,৪০০ ছাড়িয়ে গেছে, আর সরকারিভাবে শহীদ হিসেবে তালিকাভুক্ত সংখ্যা মাত্র ৮৩৬। ‘তাহলে কি আবার আমরা শহীদের সংখ্যা নিয়েও রাজনীতি করবো?’
তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী বাহিনী যারা রাজপথে গুলি চালিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যা করেছে, তারা আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এসব বাহিনীর কোনো সংস্কার হয়নি। তাদের বিচারের দাবিও উপেক্ষিত।’
রাশেদ বলেন, ‘ঘোষণায় বলা হয়েছে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। কিন্তু তিনি সত্যিই পালিয়েছেন কি না, তা আমরা জানি না। সেদিনই তার গ্রেপ্তার হওয়া উচিত ছিল। তার হাতে বহু রক্তের দাগ, বিচার তো শুধু ঘোষণায় নয়, বাস্তব কার্যকর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই হতে হবে।’
গুরুত্বপূর্ণ অনেক আন্দোলনের ঘটনাও বাদ গেছে ঘোষণাপত্র থেকে—এমন অভিযোগও তোলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, শাপলা চত্বরের ঘটনায় প্রাণহানি, মোদি বিরোধী আন্দোলনে গুলি, বিডিআর হত্যাকাণ্ড কিংবা আবরার ফাহাদ হত্যা—এসব কোনো ঘটনাই স্থান পায়নি ঘোষণায়। অথচ এই আন্দোলনগুলো তরুণদের মনে বিপ্লবের বীজ বপন করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ খাঁন আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। এতে ১/১১ সৃষ্টির ধোঁয়াশা কেটে গেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে বপন ভিত্তিতে বপন সংস্কার করতে হবে। এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
এমএ//