শুটার ফয়সাল মহারাষ্ট্রে, অর্থদাতাদের খোঁজে চলছে তদন্ত
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর প্রধান অভিযুক্ত শুটার ফয়সাল করিম মাসুদ বর্তমানে ভারতের মহারাষ্ট্রে আত্মগোপনে রয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশি সিমকার্ড বাদ দিয়ে সে এখন ভারতীয় টেলিকম অপারেটর রিলায়েন্স জিওর সিম ব্যবহার করছে। তবে নজর এড়াতে বেশিরভাগ সময়ই তার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ফয়সাল নানা কৌশল অবলম্বন করছে বলে জানা গেছে। ভিপিএন ব্যবহার করে সে কখনো নিজের অবস্থান দেখিয়েছে সিঙ্গাপুরে, কখনো থাইল্যান্ডে, আবার কখনো পুরান ঢাকায়। কিন্তু ফোনসেট পরিবর্তন না করায় আইএমই নম্বরের সূত্র ধরে প্রযুক্তির সহায়তায় গোয়েন্দারা তার প্রকৃত অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হন। বর্তমানে তার সঙ্গে রয়েছে হামলার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের চালক আলমগীর শেখ।
এদিকে হাদি হত্যাচেষ্টার পেছনে কারা অর্থ জুগিয়েছে, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত আরও জোরদার করা হয়েছে। ফয়সালের ব্যাংক লেনদেন বিশ্লেষণ করে অর্থদাতাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত আর্থিক তথ্য জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এদিকে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার করেছে র্যাব। তদন্তে জানা গেছে, অস্ত্রটি কয়েক দফা হাতবদল হয়ে শেষ পর্যন্ত নরসিংদীর একটি লেকে ফেলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সেখান থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলিসহ মোট তিনটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর আগে আগারগাঁওয়ে ফয়সালের বোনের বাসার আশপাশ থেকেও গুলি ও ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির ও মা মোসা. হাসি বেগম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, তাদের বক্তব্যে ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো স্পষ্ট হয়েছে। এছাড়া ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক, ঘনিষ্ঠ বান্ধবীসহ আরও কয়েকজনকে এই মামলায় আটক করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, কয়েকজন আসামি বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন এবং নতুন করে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হবে। সীমান্ত এলাকা থেকে আটক দুই ব্যক্তিকেও শিগগিরই আদালতে পাঠানো হবে।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিতে লাগানো নম্বর প্লেটটি ছিল ভুয়া। আসল নম্বর গোপন করতে নম্বর প্লেটে সামান্য পরিবর্তন করা হয়, যা পরে বিআরটিএর তথ্য যাচাইয়ে ধরা পড়ে। মোটরসাইকেলটি একাধিকবার মালিক বদল হয়েছে এবং সর্বশেষ ফয়সালের এক সহযোগীর পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কেনা হয়।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঘটনার দিন রাতেই ফয়সাল ও আলমগীর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। মানব পাচারকারীদের সহায়তায় সীমান্তের একটি গোপন পথ ব্যবহার করে তারা দেশ ছাড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গেল শুক্রবার দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
এমএ//