সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্নের হুমকি নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি
ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্য—সেভেন সিস্টার্স ও সিকিমকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি নিয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি বলেছেন, এ ধরনের হুমকি ভারত কোনোভাবেই সহ্য করবে না।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’ জানায়, সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, বাংলাদেশের নেতারা যদি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিতে থাকেন, তাহলে দিল্লি আর নীরব থাকবে না।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশে যুক্ত করার আহ্বান একটি ‘খারাপ মানসিকতার’ বহিঃপ্রকাশ। গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে এ ধরনের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে আলাদা করে সেই দেশের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত। বাংলাদেশ এমন কল্পনাও করতে পারে না—এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।
ভারত একটি বিশাল, পারমাণবিক শক্তিধর এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তিকর মনোভাব তৈরি হয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে এমন আচরণ করলে আমরা চুপ করে থাকব না—এটা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া দরকার।
এর আগে সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ মন্তব্য করেন, ভারতের আটটি রাজ্য নিয়ে গঠিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকারে বিশ্বাস না করা ব্যক্তিদের আশ্রয় দিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশও ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেবে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করবে। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের উসকানি দিতে ভারত অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, হাসনাত আবদুল্লাহই প্রথম নন যিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেছিলেন, ভারতের পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য স্থলবেষ্টিত এবং সমুদ্রে যাওয়ার একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ।
সংবাদমাধ্যমগুলো আরও জানায়, ওই বক্তব্যের পর থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগকারী পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডোর—যা ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত—নিয়েও হুমকি আসতে শুরু করে।
এ প্রসঙ্গে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ভারতকে হুমকি দেওয়ার আগে বাংলাদেশের নিজেদের দুটি ‘সংবেদনশীল চিকেনস নেক’ নিয়ে ভাবা উচিত। এর একটি হলো পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম গারো পাহাড় পর্যন্ত বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ। অন্যটি দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম করিডোর।